লেজার বিমের জেরে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে দমদম বিমানবন্দরে, সতর্ক করলেন পাইলটেরা

লেজার লাইটের জেরে যে কোনও দিন ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা, এমনটাই ধারনা দমদম বিমানবন্দরে অবতরণ করা পাইলটদের। এদিক প্রশাসন যে এ ব্যাপারে কোনও কাজেই করছে না তার জ্বলন্ত প্রমাণ ধরা পড়েছে মঙ্গলবারেও। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে এই লেজার লাইট বন্ধ করতে ১৪৪ ধারাও জারি হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে দমদম সন্নিহিত এলাকাবাসীকে। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। প্রশাসনকে বুডো় আঙুল দেখিয়ে চলছে এই লেজারের দাপাদাপি।

প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধেয় দুবাই থেকে কলকাতায় নামার মুখে এমিরেটসের উড়ানের পাইলট কলকাতা বিমানবন্দরকে লেজ়ার লাইটের কথা জানিয়েছেন। যে সময়ে তাঁর চোখ ধাঁধিয়েছে, তখন তিনি কলকাতা থেকে মাত্র সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরে, মাটি থেকে প্রায় ৭০০ ফুট উপরে ছিলেন। বিশেষজ্ঞ পাইলটদের কথায়, মাটির এত কাছে থাকার সময়ে সবথেকে বেশি মনঃসংযোগের প্রয়োজন হয়। কারণ, ল্যান্ডিং সব সময়েই কঠিন। সেই সময়ে পাইলটের চোখ ধাঁধিয়ে গেলে বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

তার আগের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার রাতে ওই একই উড়ানের পাইলট দুবাই থেকে শহরের মাটি ছোঁয়ার আগে একই ভাবে লেজ়ার লাইট নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। যদিও শুক্রবার তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন রানওয়ের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায়। মাটি থেকে তখন বিমানের উচ্চতা ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট। পাইলটদের দাবি, অত উপরে সমস্যা হলে তাও মেক-আপ করার সময় পাওয়া যায়। কিন্তু, মাত্র ৭০০ ফুট উপরে বিপদ ঘটলে ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে নেমে আসা বিমানকে বাগে আনা মুশকিল হবে।

চলতি বছরে এরকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে বিমানবন্দরে। প্রতিবারই পাইলট এ নিয়ে কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) জানানোর পরে এটিসি তা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়। নিয়মমাফিক সেই খবর যায় স্থানীয় পুলিশের কাছে। বিধাননগর কমিশনারেটের এক অফিসারের কথায়, ‘আমাদের কমিশনারেট এলাকায় লেজ়ার নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা রয়েছে। সেখান থেকে এরকম ঘটনা না হওয়ারই কথা। আশপাশের পুলিশ এলাকা থেকে হয়তো হচ্ছে। আমরা তাদেরও নিয়মিত সতর্ক করে চলেছি।’

উল্লেখ্য, শুক্র ও শনি — দু’দিনই এমিরেটসের উড়ান নামছিল মধ্যমগ্রামের দিক থেকে প্রধান রানওয়েতে। বিমানবন্দরের অফিসারদের বক্তব্য, যেখান থেকে লেজ়ার লাইট এসে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন পাইলট, সেই দু’টি জায়গায়ই সম্ভবত মধ্যমগ্রাম ও তৎসংলগ্ন এলাকার।

বিধাননগক কমিশনারেটের দাবি, মূলত ব্যাঙ্কোয়েট হলের ওপেন এরিয়া থেকেই কোনও অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই লেজার আলো ব্যবহার করা হচ্ছে। মাস তিনেক আগে এ নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল পুলিশ। বলা হয়েছিল, কলকাতা বিমানবন্দর লাগোয়া ব্যাঙ্কোয়েটে যদি লেজ়ার আলো ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে, তা হলে তার লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। যদিও পরিস্থিতি বদলায়নি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 9 =