বাংলাকে বঞ্চনা, ভোটের ময়দানে জবাব দেওয়া হবে, হুঁশিয়ারি মমতার

‘বাংলাকে বঞ্চন কেন?’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয়বারে ক্ষণতায় আসার পর প্রথম বাজেট নিয়ে এমনই প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একইসঙ্গে তিনি এও জানান, ‘বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে।’ সঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘এই বাজেট পক্ষপাতদুষ্ট। জনগণের বাজেট নয়। একটা দল নিজেদের খুশি করতে এই বাজেট করেছে।’ এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘ভোটের বাক্সে দেখা হবে। বাংলা একাই একশো। এই বাজেটে বাংলার মানুষকে কেন্দ্র বঞ্চনা করেছে৷ আর এর জন্য বাংলার মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না।’ প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি একই অভিযোগ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট জনগণের নয়। গরিব মানুষের জন্য নয়। একমাত্র একটা পার্টি নিজেকে খুশি করার জন্য, শুধু তাঁদের স্বার্থে বাজেট করেছে। এটা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বাজেট।’ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এদিন এ প্রশ্নও করেন, ‘বাংলার আশপাশের সব রাজ্যগুলোকে ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের টাকা দিল। একমাত্র রাজ্য বাংলা কী অপরাধ করল? যে তাকে একা করে দিলে?’ সঙ্গে এও জানান, ‘এই সরকার বাংলাকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করলেও কিন্তু ভোটের ময়দানে দেখা হবে।’

প্রসঙ্গত, এ দিন বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ বিহার-অসমের বন্যা আটকাতে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিহারে বারবার বন্যা হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ করা হবে ১১,৫০০ কোটি টাকা। অসমেও ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের জন্য দেওয়া হবে অর্থ সাহায্য। হিমাচল প্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণেও সাহায্য করবে সরকার।’ তবে এই আর্থিক ঘোষণায় কেন বাংলায় নাম নেই তা নিয়েই কার্যত ক্ষুব্ধ মমতা। বস্তুত, বর্ষা এলেই বাংলার একাধিক জায়গায় তৈরি হয় বন্যা` পরিস্থিতি। তা সে উত্তরবঙ্গ হোক বা দক্ষিণবঙ্গ। উত্তরে তিস্তা-তোর্সা-জলঢাকা-রায়ডাকের মতো পাহড়ি নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে ভাসিয়ে নেয় গ্রামের পর গ্রাম। বিধ্বস্ত হয় জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের মতো জেলা। আবার দক্ষিণবঙ্গেও একই পরিস্থিতি। যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে বর্ষার বৃষ্টি প্লাবিত করে সুন্দরবন, পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ সহ একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য বিহার ও অসমকে ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও একই পরিস্থিতি এ রাজ্যেও হয়। সঙ্গে এও জানান, ‘অন্ধ্র প্রদেশ, বিহারকে টাকা দিয়েছে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু একজনকে টাকা দিতে গিয়ে বাকিদের বঞ্চিত করা যায় না। বাংলাদেশের জনসংখ্যার কাছাকাছি ভোটার আছে এই পশ্চিমবঙ্গে। তাহলে কেন্দ্রের আর্থিক সুবিধা থেকে কেন বঞ্চিত হল এ রাজ্য, এদিন এ প্রশ্নও করেন মমতা।

এরপরেই একশো দিনের টাকা নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা। কেন্দ্র থেকে প্রাপ্য টাকা নিয়ে মমতা আগেও সুর চড়িয়েছেন, এদিন আরও একবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘ রাজ্যের পাওনা ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাকি রয়েছে। এক টাকাও দেওয়া হয়নি৷ উপরন্তু এই বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে।’ এরই পাশাপাশি তিনি উত্তরবঙ্গের বঞ্চনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভোট আসলেই দার্জিলিং যায় ওরা। প্রত্যেকবার ভোট চায় পাহাড় থেকে। কিন্তু ভোট শেষ হলেই পাহাড়কে এরা ভুলে যায়। সিকিমকে সাহায্য করেছে করুক। কিন্তু বাংলার পাহাড়কে নয় কেন?’

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =