পুজোয় অনুদান বেড়ে হল ৭০ হাজার থেকে ৮৫ হাজার, বিদ্যুতে ছাড় ৭৫ শতাংশ

পুজো আসতে বাকি প্রায় আড়াই মাস। অক্টোবরের ৯ তারিখ দেবীর বোধন, মহাষষ্ঠী। তবে পুজোর প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু করে দিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। এই আবহে মঙ্গলবার পুজোর কমিটিগুলির সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোরে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনকে নিয়ে এই বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা, পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। আর এ বছর পুজোর অনুদান বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্লাবগুলির ফায়ার লাইসেন্স সহ সব কর মকুব করল রাজ্য সরকার। পুজো কমিটি পিছু অনুদান গতবার ৭০ হাজার থেকে বেড়ে হল ৮৫ হাজার টাকা। সঙ্গে অন্যান্য বছরের মতো এবছেরও বিদ্যুতের ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও ছাড়ের শতাংশ বেড়েছে। গতবার বিদ্যুতের ছাড় দেওয়া হয়েছিল ৬৬ শতাংশ। এবার ছাড় দেওয়া হয়েছে ৭৫ শতাংশ। এ বছর কার্নিভাল হবে ১৫ অক্টোবর। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন এ আশ্বাসও দেন, পরের বছর থেকে এক লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী পুজো সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানান, প্রচুর পুজো হয়। দুর্গাপুজোর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বাংলায় প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি দুর্গাপুজো ক্লাবগুলি করে। পুজো এবার এগিয়ে এসেছে। আগাম সিদ্ধান্ত নিলে অঘটন ঘটবে না। প্রশাসন সহায়তা করবে। একইসঙ্গে তিনি এও জানান, কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সম্বন্বয় রক্ষা করতে হবে। কোনও রকম ট্রাফিক মুভমেন্টে অসুবিধা না হয়। এখন জেলাগুলোও টক্কর দিচ্ছে। জেলার পুজো দেখতে গেলে ভাবতে হবে ওরা এত সুন্দর পুজো করছে। আমি ওই সময় কলকাতা পুজোর পাশাপাশি জেলার পুজোগুলি লক্ষ রাখি। এতে আমারও জ্ঞান বাড়ে।

এদিন বড় বড় ক্লাবের পুজো কর্মকর্তাদের পরামর্শও দিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। সঙ্গে পরামর্শ দেন পুলিশকেও। বলেন, ‘ক্লাবের ভলান্টিয়রর্সদের নজর রাখতে হবে। এখন তো মহালয়া থেকেই পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়। এর জন্য আমিই দায়ী। আমারই দোষ। মহালয়ার আগের দিন থেকেই উদ্বোধন শুরু করে দিই। তাই মানুষজনও ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েন। পুজো সবাই ভালবাসে।’

একইসঙ্গে ছোট ক্লাবগুলোকেও পরামর্শ, ‘মহিলাদের ভলেন্টিয়ার্স করুন। ভাল কাজ করে। ছোট ছোট পড়ুয়াদের কাজে লাগান। ওরা চেষ্টা করেন অতিথিদের নিয়ে যাওয়ার। তবে অতিথিদের জন্য বিশেষ আয়োজন করা মানে সাধারণকে আটকে দেওয়া নয়। আমি ভিআইপি কার্ডের বিরুদ্ধে। যাঁরা ভিআইপি তাঁরা গাড়ি হাকিয়ে চলে যাবেন। আর সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াবেন আমি পক্ষে নই। ভিআইপিরা চেষ্টা করব পিছনে থেকে সহায়তা করার। এত ভিড়ে ভিআইপি যাতায়াত করলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। লক্ষ রাখতে হবে কোনও রকম পদপিষ্টের ঘটনা যাতে না ঘটে।’

একইসঙ্গে ক্লাবগুলি তাঁর পরামর্শ, ‘কোন পুজোর কী থিম পুলিশকে শেয়ার করুন। আমি এক সংবাদপত্রে দেখেছি কেউ নাকি ১১২ ফুটের দুর্গাপুজো করছে। ভাবতে পারেন? এতে পদপিষ্ট হয়ে যাবে। আমি লাইটিং, লেজারের খেলা করলাম। আরে প্লেনের দুর্ঘটনা হতে পারে। অন্য মানুষের ক্ষতি হতে পারে। তবে পদপিষ্টের ঘটনা যাতে না ঘটে।’

এর পাশাপাশি মমতা এদিন এও বলেন, বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট, রেলস্টেশন কভার করতে হবে যাতে মানুষের অসুবিধা না হয়। ড্রোন, কুইক রেসপন্স টিম, সিসিটিভি সব ব্যবস্থা রাখতে হবে। মেয়েদের নিরাপত্তা, বয়স্ক মানুষদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

আর কোনও ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে মমতার পরামর্শ, ‘ভিড় এড়াতে অনেকগুলো এন্ট্রি-এক্সিট করুন পুজো কমিটিগুলি। একটা এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্ট রাখলে অসুবিধা হবে। প্রতিটি মণ্ডপে বিদ্যুতের কানেকশন, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিয়ম মেনে করতে হবে। প্রথম হব বলে এমন কিছু বানালাম তাতে সারা কলকাতা স্তব্ধ হল এমন যাতে না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।’

এদিকে এদিন কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হয়েছে। সেখানে বঞ্চনাই জুটেছে বাংলার কপালে এমনটাই দাবি মমতার। এরই রেশ ধরে মমতা এদিন বলেন, ‘আজ বাজেটে আমরা কিচ্ছু পাইনি। বাংলার ভাগ্যে শূন্য জুটেছে।’ তবে দুর্গাপুজোতে খামতি রাখতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। তাই অনুদানের সঙ্গে বেড়েছে ছাড়ও। এই প্রসঙ্গেই মমতা এদিন বলেন, ‘প্রথম শুরু করেছিলাম ২৫ হাজার দিয়ে। তারপর আস্তে-আস্তে ৭০-এ এসেছে। এবারে যদি সব করে দিই আগামী বছর কী হবে? আসছে বছরের জন্য কিছু তো রাখতে হবে? এবার ৭০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ হাজার করলাম। এই গরিব সরকার আর কী করতে পারে বলুন? বাদ বাকি ম্যানেজ করে নেবেন। আগামী বছর ১ লক্ষ করে দেব। দু’বছরেরটা ঘোষণা করে দিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 17 =