বাজেটে নীতীশ খুশি কি না রয়ে গেল প্রশ্ন

মঙ্গলবার বাজেটে বিহারকে অনেক কিছুই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তবে, বিহারের জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদা চেয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল ইউনাইটেডের প্রধান নীতীশ কুমার। এটা তাঁর দলের দীর্ঘদিনের দাবি। ২০০০ সালে, বিহার থেকে খনিজ-সমৃদ্ধ এলাকা নিয়ে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের সময় থেকেই নীতীশ কুমার এই দাবি জানাচ্ছেন। ইউপিএ সরকারের কাছেও এই দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। প্রথম মোদি সরকারের সময় জোটে থাকলেও, তাঁর এই দাবি জানানোর মতো শক্তি ছিল না। এদিন সেই মর্যাদা না আদায় করতে পারলেও, বিহারের জন্য এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দের অভাব নেই। তাতে এনডিএ সরকারের অন্যতম শরিক নীতিশ কুমার খুশি কি না তা নিয়ে এদিন বাজেট পেশের পর যথেষ্ট রহস্য রেখে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে উঠেছে প্রশ্ন।

কারণ, নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, বিশেষ বিভাগের মর্যাদার জন্য তাঁদের দাবি দীর্ঘদিনের। সেটা পূরণ না হলেও, বিহারের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র যে সহায়তা করছে, সেটা একটা ‘শুরু’। এদিন, বিহার বিধানসভার বাইরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশেষ বিভাগের মর্যাদার কথা বলছিলাম। অনেকে বলেছেন, বিশেষ বিভাগের মর্যাদার বিধানটি অনেকদিন আগেই বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাই, এর পরিবর্তে বিহারের উন্নয়নে সহাযয়তা করা উচিত। এখন, তারা তা করতে শুরু করেছে।’

এরপরও নীতীশ রাজ্যের জন্য বিশেষ মর্যাদার দাবি জানাতে থাকবেন কি না সে ব্যাপারে প্রশ্ন করায় রহস্য রেখে জানান, ‘আপনারা ধীরে ধীরে সবকিছু জানতে পারবেন।’

প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ, বিহারের জন্য একটি বিশেষ প্যাকেজ এবং বিহারের সড়ক উন্নয়নে ২৬,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে গয়ায় একটি বাণিজ্যিক হাব তৈরি করা হবে। কোসি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিষ্ণুপদ মন্দির ও মহাবোধী মন্দিরে করিডোর তৈরি, রাজগীর, গয়া, নালন্দাকে পর্যটনস্থল হিসেবে গড়ে তোলার মতো একাধিক বিহার কেন্দ্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। তবে, তা শেষ পর্যন্ত নীতীশ কুমারকে খুশি করতে পারল কিনা, তা নিয়ে রহস্যই থেকে গেল। সোমবারই, কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছিল, বিহারকে বিশেষ বিভাগের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না, বদলে, অন্যভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দুই জেডিইউ মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এটি একটি ‘বিশেষ প্যাকেজ’ এবং অন্য ধরনের সহায়তা। বিহার এইভাবে কেন্দ্র থেকে প্রচুর সাহায্য পাবে।

তবে, লালু প্রসাদ যাদবের আরজেডি এবং বিহারের অন্যান্য বিরোধী দলগুলি জেডিইউকে নিশানা রতে ছাড়েনি। এমনকি, নীতীশ কুমারের পদত্যাগের দাবিও করেন। লালুপ্রসাদ যাদব বলেন, ‘মনে হচ্ছে ক্ষমতার জন্য নীতীশ কুমার বিহারের আকাঙ্খা এবং বিহারের জনগণের আস্থার সঙ্গে আপোস করেছেন। তিনি বিহারের জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তা কেন্দ্র অস্বীকার করেছে। তাই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।’

এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলতেই হয়, সংবিধানে কোনও রাজ্যকে বিশেষ বিভাগের মর্যাদা দেওয়ার কোনও বিধান ছিল না। কিন্তু, পঞ্চম অর্থ কমিশনের সুপারিশে ১৯৬৯ সালে এটি চালু হয়েছিল। পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলি যাতে আরও বেশি কেন্দ্রীয় সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে, দেশের মোট এগারোটি রাজ্যের এই মর্যাদা আছে – অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, সিকিম, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং তেলঙ্গানা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =