ময়নাগুড়ির যেখানে কংগ্রেস কর্মীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে তা আদতে প্রত্যন্ত গ্রাম। সেখান থেকে অনেকটা দূর থানা। দশ বছরের ছেলে জানায়, গ্রামে জঙ্গলের ধারে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার বাবাকে। তার আগে বাড়ির বেড়া ভেঙে ঢুকেছিল গ্রামের কয়েকজন। বাবাকে ঘর থেকে হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে নিয়ে যাচ্ছিল ওরা। গালিও দিচ্ছিল। সব দেখে মা অঝোরে কাঁদছেন। বাধা দেওয়ার মতো শক্তি ছিল না কারোর।
এদিকে ছেলেটার বয়স মাত্র দশ। স্কুলে পড়ে বাচ্চাটা। বয়স বড় জোড় দশ। বাবাকে ওইভাবে নিয়ে যেতে দেখে দুষ্কৃতীদের পিছু নিয়েছিল একাই। দূর থেকে দেখে বাবাকে গাছে বাঁধছে ওরা, তারপর বেধড়ক পেটাচ্ছে, কী যেন একটা অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে। দৌড় শুরু করেছিল ওই দশ বছরের শিশুটা। থানায় যেতে রাস্তায় পড়ে নদী। নদী পেরোয়, তারপর দৌড়য়। গ্রামেরই লোকদের জিজ্ঞাসা করতে করতে পৌঁছে যায় থানায়। তারপর একেবারে ‘পুলিশকাকুকে’ সঙ্গে নিয়ে অকুস্থলে। ততক্ষণে গাছে বাঁধা অবস্থাতেই হেলে পড়েছে বাবার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত শরীর। নদী পেরিয়ে তিরিশ মিনিট দৌড়ে থানায় গিয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারল না জলপাইগুড়ির ময়নাগুলির নিহত কংগ্রেস কর্মী মানিক রায়ের ছেলে।
বুধবার রাতে ময়নাগুড়িতে একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মানিক রায় নামে এক কংগ্রেস কর্মীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের একটি পুরনো বিবাদের জেরে এই ঘটনা। পাঁচ বছর ধরে সপরিবারে ঘরছাড়া ছিলেন মানিক। রবিবার দলেরই সাহায্যে বাড়ি ফেরেন। তারপর থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, যাঁরা অভিযুক্ত সকলেই তৃণমূল কর্মী। বুধবার রাতে মানিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাছে বেঁধে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মানিকের নাবালক ছেলে জানিয়েছে, ‘আমরা তখন ঘরে ছিলাম। ওরা প্রথমে বাইরে থেকে ঢিল মারতে শুরু করে। ওরা বলছিল, বেরা বেরা। আমরা বেরোয়নি। ওরা বেড়া ভেঙে ঘরে ঢুকে বাবাকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়। বাবাকে গাছে বেঁধে ওরা ভীষণ মারছিল। আমি দূর থেকে দেখেই দৌড়ে থানায় যাই। তারপর পুলিশ আমাকে গাড়িতে নিয়ে আসে। তিরিশ মিনিট দৌড়েছিলাম।’
নিহতের স্ত্রী জানান, ‘তৃণমূলের লোকেরা ওর নামে নারী নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করেছিল। পাঁচ বছর আমরা বাড়ি থেকে শিলিগুড়িতে ছিলাম। রবিবার বাড়িতে ফিরে আসি। এরপর বাপ্পা রায়, অমল দাস ওরা আবার এল আমাদের বাড়িতে। ওরা এসে বলে তোকে আজ ডিজেল দিয়ে পোড়াব, গাছে বেঁধে মারে। অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপাল।’
এই গোটা ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল। এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে খোঁজ চলছে।