তীব্র সঙ্কটে রাজ্যের হিমোফিলিয়া আক্রান্তরা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, জেলায় জেলায় ‘ফ্যাক্টর ৮’-পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার জেরে হিমোফিলিয়ার চিকিৎসায় রাজ্যের দুই নোডাল সেন্টার এনআরএস এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। জীবনদায়ী ওষুধের জোগানে টান পড়তে শুরু করেছে। সন্তানদের প্রাণদায়ী ওষুধ নিশ্চিত করতে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটছেন মায়েরা। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, হিমোফিলিয়ায় জিনগত ত্রুটির কারণে রক্ত জমাট না বাঁধে না। কারও ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর-৮ নামের প্রোটিনের অভাবে রক্ত জমাট বাঁধে না। কারও ক্ষেত্রে আবার ফ্যাক্টর-৯-এর অনুপস্থিতিতে এই রোগ হয়। ফ্যাক্টর-৮ এর অনুপস্থিতি ঘটলে বলা হয়, হিমোফিলিয়া-এ ও ফ্যাক্টর-৯ এর অনুপস্থিতিকে বলা হয় হিমোফিলিয়া-বি। সময়মতো ফ্যাক্টর না দিলে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরের সঙ্কটেই ভুগছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
এই ওষুধ সঙ্কটের কারণ হিসেবে প্রথমেই আসছে গত এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্য ভবনের অনড় মনোভাবের ঘটনা। যার জেরে হিমোফিলিয়ার ওষুধ সঙ্কটের মূল কারণ বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে হিমোফিলিয়া আক্রান্তদের হাতে মহার্ঘ ওষুধ তুলে দিতে ৫৭ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে কেন্দ্র। তবুও মিলছে না ওষুধ। এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ভবন যে খবর মিলছে তাতে কোভিড পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বেই ফ্যাক্টরের জোগানে টান পড়েছে। এরপরও ৮ টাকা ৩০ পয়সা দরে ফ্যাক্টর সরবরাহে রাজি হয় একটি সংস্থা। অন্য যে দুই সংস্থা ফ্যাক্টর সরবরাহ করে তারা স্বাস্থ্য ভবনের দরপত্রে অংশগ্রহণই করেনি। এদিকে ইচ্ছুক সংস্থাকে বরাত দিতে বেঁকে বসে স্বাস্থ্য ভবন। বক্তব্য ছিল, এই সংস্থাই বছর তিনেক আগে ৬ টাকা ৫২ পয়সা দরে হিমোফিলিয়ার ওষুধ সরবরাহ করেছে।
সপ্তাহখানেক আগে জট কাটাতে স্বাস্থ্য সচিবের তত্ত্বাবধানে হিমোফিলিয়া সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে জট কাটা তো দূর অস্ত, ফ্যাক্টরের বিকল্প হিসেবে প্লাজমা থেরাপিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত আদতে পিছনের দিকে হেঁটে যাওয়া।
ফ্যাক্টর সরবরাহের সঙ্কটের জন্য হিমোফিলিয়ার আরও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি এক্সটেন্ডেড হাফ লাইফ অথবা নন ফ্যাক্টর রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিকে আপন করে নিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা, গুজরাত, তেলঙ্গানা, পঞ্জাব, ছত্তিসগড়, এমনকী ঝাড়খণ্ডও। কেন্দ্রের আর্থিক অনুমোদনের পরও এ রাজ্যেই কেন অমিল হিমোফিলিয়ার আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সমস্যা সমাধান করা হয়েছে, খুব শীঘ্রই ফ্যাক্টর সরবরাহ করা শুরু হবে।’