নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট মমতার

বলার সুযোগ পাননি। সেই কারণেই নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ওয়াক-আউট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের এই আচরণে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, ‘আর কোনওদিন এই বৈঠকে যোগ দেব না।’ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করে বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে দেশ ও বাংলার স্বার্থে আমি এসেছি। বিরোধীদের আর কেউ আসেনি। বাজেটে আমাদের সঙ্গে বঞ্চনা করেছেন। বাংলার উন্নয়নের সমস্ত প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছেন। বিরোধী শাসিত কোনও রাজ্যকে সুযোগ দেন না। তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বন্ধ, রুরাল রোড যোজনা বন্ধ। এমনকী ফুড সাবসিডি পর্যন্ত দেননি। আমরা ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা পাই। এই বাজেটেও কিছু নেই, শুধু জিরো। তিনি আরও বলেন, “আমি বললাম, বিভাজন করছেন কেন? আপনাদের খুশি হওয়া উচিত যে বিরোধীদের তরফে একা আমি বৈঠকে যোগ দিয়েছি। তারপরও বিভাজন করছেন? আপনাদের এই বঞ্চনা আমি মানি না। আমি চললাম।এইটুকু বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মাইকটা স্টপ করে দিয়েছে।’ এরই পাশাপাশি মমতা বক্তব্য রাখার সময় প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনার পক্ষেও সওয়াবল করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নীতি আয়োগের তো কোনও আর্থিক ক্ষমতাই নেই৷ তাহলে প্ল্যানিং কমিশনকে ফিরিয়ে আনা হোক৷’

নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে আগেই ডামাডোল শুরু হয়েছিল। বাজেটে বঞ্চনা করা হয়েছে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে, এই অভিযোগেই নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করেন ৮ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে যোগ দেন। ইন্ডিয়া জোটের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ, শনিবারের নীতি আয়োগের বৈঠকে বক্তব্য শুরু করতেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার জেরে এ দিন নীতি আয়োগের বৈঠক শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, ‘আমায় বলতে দেওয়া  হয়নি। ৫ মিনিটের মধ্যেই আমার মাইক অফ করে দেওয়া হয়।’

এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ অভিযোগও করেন, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে ২০ মিনিট বলতে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, তাঁর আগে বক্তব্য রাখা অসম, গোয়া, ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রীদেরও ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বক্তব্য শুরু করতেই ৫ মিনিটের মধ্যে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ওয়াকআউট প্রসঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের শরিক তথা সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কেন গিয়েছেন? তা উনি আগেই বলে গিয়েছেন। উনি অসত্য বলেছিলেন যে হেমন্ত সোরেন যাবেন। উনি যে সরকারের বিরুদ্ধে নয়, তা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রমাণ করলেন। উনি যাওয়ার আগেই বলে গিয়েছিলেন যে যাবেন, কথা বলবেন, তারপর বেরিয়ে আসবেন। মোদীজিকে খুশি করার জন্য যাবেন, তারপর ওনাকে ঠিকমতো বলতে দেওয়া হবে না, এটা উনি জানেন, অথবা সেভাবেই অ্যারেঞ্জমেন্ট করা আছে। তখনই প্রতিবাদ দেখিয়ে উনি বেরিয়ে আসবেন। যেন উনি সরকারের বিরুদ্ধে। যে কেউ জানত যে উনি এরকম করবেন, বেরিয়ে এসে বলবেন যে অপমান করা হয়েছে। এটা ঠিক যে মুখ্যমন্ত্রী বলতে চাইলে তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। উনি নিজে যখন প্রশাসনিক বৈঠক করেন, তখন বিরোধীদের কাউকে ডাকেন না। তবে আজ ওঁকে ঘণ্টাখানেক বলতে দেওয়া উচিত ছিল।’ এরই পাশাপাশি বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি এখনও বোঝেনি মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্য? প্রশাসনিক সভায় বিরোধীদের ডাকেন না, মেডিক্যাল বোর্ড, টি-বোর্ড বা অ্যাডভাইজরি বোর্ডে বিরোধীদের জায়গা দেওয়া হয় না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + twelve =