খোদ কলকাতার রাস্তায় এক গাড়ির পিছনে একটি লেখা নজরে আসে অনেকেরই, ‘বিলিভ আ স্নেক নট আ গার্ল’। বাংলায় এর তর্জমা করলে হয়‘সাপকে বিশ্বাস করতে পারেন, কোনও মেয়েকে নয়।’ সঙ্গে দুটো মেয়ের শিলিউড। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, নিছকই মজা! নাকি নেপথ্যে রয়েছে তীব্র নারীবিদ্বেষ। তা নজরে আসে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশেরও।
সাধারণত, প্রকাশ্যে এই ধরনের উস্কানিমূলক বার্তা আইনের দৃষ্টিতে মানহানি বলেই গণ্য হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৫৬ (১) ধারায় হতে পারে শাস্তিও। যদিও পুলিশের শীর্ষ কর্তারা আইনের পথ মাড়াননি। শুধু গাড়ির মালিককে এই লেখা মুছে ফেলতে বলেন। কে এই গাড়ির মালিক, তার বিস্তারিত পরিচয় সামনে আনতে চায়নি পুলিশ। তবে, তাঁকে সসম্মানে ডেকে পুলিশ র্কতারা জিজ্ঞেস করেন, এমন একটি নেতিবাচক বার্তা দিয়ে নিজের পরিবারের মহিলাদেরও হেয় করছেন কি না তা নিয়েও। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পুলিশের কথা শোনেন গাড়ির মালিক। এই ধরনের বার্তার কারণে তাঁকে যে কোনও দিন হেনস্থার মুখে পড়তে হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও তাঁকে জানানো হয়। তা ছাড়া, আইনি পদক্ষেপ তো রয়েছেই।
এরপরই গাড়ির পিছন থেকে লেখাটি মুছে দেন ওই ব্যক্তি। পুরো ঘটনার কথা এবং গাড়িটির আগের এবং পরের ছবি নিজেদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্টও করেছে কলকাতা পুলিশ।
দীর্ঘদিন ধরে পুরুষদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে লড়াই চালিয়ে আসা নন্দিনী ভট্টাচার্য-র কথায়, ‘আমি নিশ্চিত, যিনি গাড়িতে এই স্টিকার লাগিয়েছেন তিনি কোনও মহিলার কাছ থেকে বড় কোনও আঘাত পেয়েছেন।’ সমাজতত্ত্ববিদ সুকন্যা সর্বাধিকারী বলছেন, ‘ইংরেজিতে লেখা মানে তো ধরে নিতে হবে শিক্ষিত। গাড়ি আছে, মানে স্বচ্ছল। তাঁর কি এটাকে হিউমার মনে হয়েছে? এ তো সাংঘাতিক!’
আর অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রর কথায়, ‘মনে হচ্ছে উনি কোনও মহিলার কাছে ঠকেছেন। সেখান থেকেই এই বিদ্বেষ। ওঁর মনের চিকিৎসা দরকার।’ কোন মানসিক অবস্থায় একজন ব্যক্তি গাড়ির পিছনে এমন লিখতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে প্রত্যেকের মনেই। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘সম্ভবত প্রেমঘটিত বা আর্থিক বা অন্য কারণে তিনি কোনও মহিলার কাছ থেকে বড় রকমের আঘাত পেয়েছেন বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। যে কারণে সমস্ত নারীকুলকেই তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন।’
কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘পুলিশ ঠিক কাজই করেছে। তবে, যাঁর গাড়িতে এটা লেখা ছিল, তাঁর কাউন্সেলিং করা উচিত ছিল।’