পুরনিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে উঠে আসছে নতুন সব তথ্য। পুরসভায় কর্মী নিয়োগের অনিয়মের পিছনে ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ বা ডিএলবি-এর এক বা একাধিক ‘অদৃশ্য হাত’ আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তদন্তকারীদের মনে। কারণ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা ইডির তথ্যে উঠে এসেছে, সময়ে-অসময়ে কর্মী নিয়োগের যাবতীয় অনুমোদন এই ডিএলবি থেকেই মিলত। এদিকে ইতিমধ্যেই ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ বা ডিএলবি-এর ডিরেক্টর জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। এর পাশাপাশি দক্ষিণ দমদম পুরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাক্তন চেয়ারম্যান পাঁচু রায়ের ভূমিকা কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের নজরে।
কারণ, দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ২৯ জনের একদিনে নিয়োগে অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তারই সূত্রে ধরে জ্যোতিষ্মান ও পাঁচু রায়ের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুধু জ্যোতিষ্মানই নয়, এরইমধ্যে এবার বাকি পুরসভাগুলির ক্ষেত্রেও ডিএলবির ভূমিকা তদন্তকারীদের আতসকাচের নিচে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে অনিয়মের শিকড় কি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ এই ডিএলবি-তেই লুকিয়ে কি না তা নিয়েও। কারণ, তদন্তকারীরা মনে করছেন, এত অনিয়ম হচ্ছে আর এই সংস্থার কেউ জানছেন না সেটা সম্ভব নয়। আর সেই জায়গা থেকেই কারও না কারও অঙ্গুলিহেলনে বড়সড় আর্থিক রফা এখান থেকে শুরু হত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে তথ্য বলছে, দফায় দফায় রাজ্যের একাধিক পুরসভাকে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিয়েছে এই সংস্থা। ইতিমধ্যে সিবিআই চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, মোট ১৭টি পুরসভায় ১৮২৯ জন কর্মী নিয়োগে ছত্রেছত্রে অনিয়ম হয়েছে। এই জায়গায় তদন্তকারীরা মনে করছেন, ডিএলবি থেকে যেহেতু কর্মী নিয়োগের অনুমোদন মিলত, সে কারণে এখানে কারও না কারও ‘অদৃশ্য হাত’ থাকায় সহজেই অনিয়ম করে পুরসভাগুলি ছাড় পেয়ে যেত। আর এই প্রসঙ্গে বলতেই হয়, কলকাতা ছাড়া পুরসভাগুলিতে নিয়োগের অনুমোদন দিত ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ বা ডিএলবি। ২০১৭ সালে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভা এলাকায় পুরকর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হয়। সে সময় রাজ্যে কোনও পুরসভাতেই পরীক্ষা নেওয়ার নিজস্ব পরিকাঠামো ছিল না। লোকাল বডির কাছে সাহায্য চাওয়া হতো। ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ বা ডিএলবি থেকেই নিয়োগে অয়ন শীলের কোম্পানিকে কাজে লাগানোর সুপারিশ যায় বলে সূত্রের খবর। অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজেন প্রাইভেট লিমিটেড ইতিমধ্যেই তদন্তকারীদের স্ক্যানারে। ডিএলবির একজন নাকি একাধিকজন এই দুর্নীতিতে যুক্ত, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
ইতিমধ্যে কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এমনকী পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, ডিএলবি-এর অফিসে হানা দিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও তদন্তকারীরা নিয়ে গিয়েছেন। এই ফাইলের মধ্যে থেকেই পুর নিয়োগ কেলেঙ্কারির শিকড়ে পৌঁছাতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এই প্রসঙ্গে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ জানান, ‘ডিএলবিও অস্বীকার করলে আর কিছু বলার নেই। কারণ ওখান থেকেই তো বিষয়টা শুরু। মাথা হচ্ছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী।’ একইসঙ্গে বিজেপি কাউন্সিলর এ প্রশ্নও করেন, ‘এখন সবাই যদি বলে কিছুই জানত না, তাহলে চাকরিটা হল কী করে? ১৮০০ লোককে ধরে নিয়ে যেতে হবে।’
এই প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘ডিএলবি-সহ সকলে এর দাবিদার, অংশীদার। পুরসভার চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব একার নয়। তার মাথায় মন্ত্রীর সেক্রেটারিরাও ছাড় পেতে পারেন না।’ উল্টোদিকে তবে তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর বক্তব্য, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তো কিছু বলা যায় না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, সর্বভারতীয় নিয়োগক্ষেত্রে নিট নিয়ে যা হয়েছে, তা নিয়ে তো সিবিআইয়ের মুখে কুলুপ। শুধু বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করা যে টার্গেট, তা বোঝা যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তৃণমূল মুখপাত্র।