ভয়ঙ্কর ঘটনা উত্তর প্রদেশের আগ্রায়। যা আরও একবার যোগী রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। ২৪ বছরের রূপ কিশোর ওরফে হ্যাপির অভিযোগ, এক সামান্য বিবাদের জেরে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে জীবন্ত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল চার দুষ্কৃতী। পরে পথ কুকুররা, তাঁকে মাটি খুঁড়ে বের করে। পথ কুকুরদের জেরেই তিনি প্রাণে বেঁচেছেন। তবে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রূপ কিশোর। আততায়ীদের প্রত্যেকের নাম-পরিচয় দিয়ে, এই ঘটনার বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রূপকিশোরের পরিবারের।
এফআইআর অনুযায়ী, এই ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৮ জুলাই। তাঁর মা, রামবতীর অভিযোগ, ওই দিন রাতে তাঁদের বাড়ির কাছে দুই পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে একটি বিবাদ হয়েছিল। এক পক্ষের এক ব্যক্তি তাঁদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করছিলেন। তাঁর ছেলে রূপ কিশোর, বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার প্রতিবাদ করেছিলেন এবং ওই ব্যক্তিকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। তিনি তখনকার মতো চলে গেলেও সেই রাতেই অঙ্কিত, গৌরব, করণ এবং আকাশ নামে চার যুবক তাদের বাড়িতে চড়াও হয়। প্রত্যেকেই এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তারা বলে, গ্রাম প্রধান পুষ্পেন্দ্র তাঁকে ডাকছে। পুষ্পেন্দ্রর সঙ্গে ফোনে কথাও বলানো হয়। এরপর, ওই চার প্রভাবশালী যুবকের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিল রূপ কিশোর। এরপর ওই চার যুবক তাঁকে আগ্রার আর্টোনি এলাকায় নিয়ে যায়। তারপর শুরু হয় বেধড়ক মারধর। তারপর তারা রূপ কিশোরের গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় যমুনা নদীর তীরে। সেখানে, তাঁকে আরেকপ্রস্থ মারধর করা হয়। বেদম মার এবং গলায় ফাঁসের জেরে সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন রূপ কিশোর। তাঁকে মৃত ভেবে যমুনার তীরেই বালিতে গর্ত খুঁড়ে কবর দিয়ে দিয়েছিল অভিযুক্ত চারজন। জীবন্ত কবর দেওয়া সত্ত্বেও রূপ কিশোর অবশ্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। আর তা সম্ভব হয়েছে কয়েকটি পথ কুকুরের জন্য।
রূপ কিশোরের ধারনা, তাঁর রক্তের গন্ধ পেয়ে ওই কুকুরগুলি যমুনার তীরে পৌঁছেছিল। রূপ কিশোরকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছিল, সেখানকার মাটি খুঁড়েছিল তারা। একটু পরই অচেতন রূপ কিশোরের দেহটি বেরিয়ে আসে। কুকুরগুলি তাকে কামড়াতে-আঁচড়াতে শুরু করেছিল। কুকুরগুলি তার পায়ের মাংস কামড়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। যন্ত্রণায় জ্ঞান ফিরে আসে তাঁর। এরপর, কোনোভাবে ওই কবর থেকে বেরিয়ে তিনি পাশের এক বসতিতে পৌঁছন। সেখানকার বাসিন্দাদের তিনি পুরো ঘটনাটি জানান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর দেন। খবর পেয়ে তাঁর পরিবারের লোকজন সেখানে আসেন এবং তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। গত ১৩ দিন ধরে তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকদের ধারনা, অন্তত এক ঘণ্টা তিনি মাটির নিচে ছিলেন। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
এদিকে, রূপ কিশোরের মা রামবতী ও ভাই দীপক, ১৯ জুলাই সিকান্দ্রা থানায় গিয়ে এই ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগ গ্রহণ করলেও, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রামবতী ও দীপকের। বেশ কয়েকদিন ধরে থানায় এসেও কোনও সুরাহা পাননি। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী বলেই, প্রাথমিকভাবে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করেছিল বলে অভিযোগ তাঁদের। অবশেষে পুলিশ কমিশনার জে রবিন্দর গৌরের কাছে অভিযোগ জানান তাঁরা। তাঁর নির্দেশে পুলিশ রূপ কিশোরের পরিবারকে ডেকে ফের অভিযোগ নেয় এবং নতুন করে মামলা দায়ের করে। স্থানীয় থানার পুলিশের অবশ্য দাবি, প্রাথমিকভাবে এটি একটি হামলার মামলা ছিল। তাই জামিনোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছিল। তবে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও, গ্রেফতারি এড়াতে চার অভিযুক্তই পালিয়েছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।