ভিনেশের সৌজন্যে এক স্বর্ণালী সন্ধ্য়ার অপেক্ষায় দেশবাসী

অলিম্পিক্সে ভারতের চতুর্থ পদক নিশ্চিত করে ফেললেন ভিনেশ ফোগট।  প্রথম ভারতীয় হিসেবে কুস্তির ফাইনালে ‘দঙ্গল’ কন্যা। ৫০ কেজি বিভাগের সেমিফাইনালে কিউবার গুজ়মান লোপেজ়কে হারিয়ে ইতিহাস গড়লেন তিনি। আর সেই সঙ্গে সোনার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। বিনেশ যে ফর্মে রয়েছেন তাতে এমন প্রত্যাশা রাখাই যায়। এমন এক প্রতিপক্ষ যিনি টানা ৮২ ম্যাচ জিতে নেমেছিলেন। তাঁকেও হারিয়ে দিয়েছেন বিনেশ ফোগাট। ৫০ কেজি ফ্রি-স্টাইল কুস্তির সেমিফাইনালে কিউবার প্রতিপক্ষ গুজমানকে ৫-০ হারিয়ে ফাইনালে বিনেশ। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন যে অনেক অনেক বড় হবে, এ আর নতুন কী!

আগের ম্যাচে জিতেছিলেন  ১০-০ ব্যবধানে। ফলে মঙ্গলবার রীতিমতো আক্রমণাত্মক খেলছিলেন লোপেজ়। ফলে রক্ষণাত্মকভাবে শুরু করেন ভিনেশ। পয়েন্ট পাচ্ছিলেন না লোপেজ়। আবার তিনিও ভাল ডিফেন্স করছিলেন। সেকারণেই বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষকে  ফেলে দিলেও পয়েন্ট তুলতে পারেননি ভারতীয় কুস্তিগীরও। ম্যাচের বয়স তখন ৩ মিনিট তখনই প্রথম পয়েন্ট পান ভিনেশ।

কুস্তির নিয়মে  দু’বার ৩০ ওয়ার্নিং পেলে  ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পয়েন্ট তুলতে হয়। অলিম্পিক্সে সেমিফাইনালে সেটাই ঘটে  লোপেজ়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পয়েন্ট তুলতে পারেননি। পেনাল্টি হিসেবে  ১ পয়েন্ট পান ভিনেশ। এরপর আবার একই পরিস্থিতিতে পড়েন তিনিও। ৩০ সেকেন্ডে পয়েন্ট তুলতে না পারলে, ১ পয়েন্ট পেয়ে যেতেন প্রতিপক্ষ। ৩০ সেকেন্ডে পয়েন্ট তুলে ৩-০ এগিয়ে যান ভিনেশ।

এদিকে পিছিয়ে পড়ায় পয়েন্ট পেতেই হত লোপেজকে। সেই চেষ্টায় আরও ২ পয়েন্ট হারান তিনি। ৫-০ এগিয়ে যান ভিনেশ। শেষপর্যন্ত আর ম্যাচে ফিরতে পারেননি কিউবার কুস্তিগীর।  ৫-০ পয়েন্টে জিতে ফাইনালে ওঠেন ভিনেশ। বুধবার ফাইনাল। সোনার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ  আমেরিকার সারা অ্যান হিল্ডেব্রান্ট।

ভুলে গেলে চলবে না ভারতীয় কুস্তি সংস্থার তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছিলেন কুস্তিগিররা। সেই বিপ্লবের শুরুটা হয়েছিল বিনেশ ফোগাটকে ঘিরেই। আন্তর্জাতিক স্তরে পদকজয়ী ভারতীয় কুস্তিগিররা একজোট হয়ে লড়াই করেছিলেন। ধরনা অবস্থানে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়। সমস্ত অপমান, বঞ্চনার জবাব যেন অলিম্পিকের মঞ্চেই দিতে প্রস্তুত বিনেশ ফোগাট। বিভিন্ন ম্যাচে তাঁর সেলিব্রেশনের ধরনও বলে দিচ্ছে, সোনার মিশন-এই নেমেছেন ভারতের কন্যা। এছাড়াও বিনেশের কাছে নানা প্রতিকূলতা ছিল। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ৫৩ কেজি বিভাগে অংশ নিচ্ছিলেন বিনেশ। কিন্তু হাঁটুর চোট এবং অস্ত্রোপচারের পর তাঁর কেরিয়ারই শেষ হতে চলেছিল। তাঁকে ৫০ কেজি বিভাগে শিফ্ট করতে হয়। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিক এবং টোকিওতে কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নিয়েছিলেন বিনেশ। গত এক-দেড় বছর চোটের পাশাপাসি নানা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যেও কাটিয়েছেন বিনেশ। এবার বুধবারের সন্ধের দিকে তাকিয়ে সারা দেশ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + four =