‘দাবি একটাই, দোষীর ফাঁসি চাই’৷ জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষ, শতাব্দী রায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়দের পাশে নিয়ে মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত দীর্ঘ পথ হাঁটলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঞ্চে তো বটেই, দর্শকাসনের প্রথমসারিতেও প্রাধান্য রইল সেই মহিলা বাহিনীরই৷ সর্বসমক্ষে ফের জানালেন, ‘রাজনীতি করার আগে আমি একজন মানবিক মানুষ৷ ঘটনায় জ্বলে যাচ্ছিলাম৷ আমি কারও ক্ষতি করিনি৷’ তবে তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগজুড়েই রইল বাম-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে রেখে জোরাল আক্রমণ৷
মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রতিবাদ প্রতিরোধ মিছিলে আসার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এমপি, এমএলএ, মন্ত্রী ও অনেক নেতৃবৃন্দ আছেন৷ যাঁরা স্লোগান দিয়েছেন তাদেরকে আপনারা চেনেন৷ শনিবার সব ব্লকে ব্লকে মিছিল বেরবে। ফাঁসির দাবি ও বাম-রাম চক্রান্তের বিরুদ্ধে৷ দরকার হলে দল সাধারণ মানুষ কী বলছে তাতে গুরুত্ব দিন। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সত্য নয়। ঘটনা না ঘটলেও ফেক ভিডিও করে ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। এআই আজকে কী জিনিস জানেন? আমি বললাম না। আমি গেলাম না। কিন্তু আমার গলা নকল করে হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন এটা কলিযুগ৷’ এরপরেই মিডিয়া ট্রায়ালের প্রসঙ্গ টানেন মমতা৷ তাঁর দাবি, ছাত্রছাত্রীরা যা দাবি করেছেন, পুলিশের তরফে তা-ই করা হয়েছে৷ মমতার কথায়, ‘ঘটনার এভিডেন্স মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য বাইরে আসতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রীরা যা করতে বলেছেন কলকাতা পুলিশ তাই করেছে। ডিএনএ টেস্ট, ফরেন্সিক, ডগ স্কোয়াড অবধি পাঠিয়েছে।’
বিজেপি-কে জোরাল আক্রমণ করে মমতার সওয়াল, ‘বিলকিসের পরিবারের সাথে অত্যাচার কে করেছে?হাথরস, উন্নাও কে করেছে?উত্তরাখণ্ডে কী হল? নয়দিন পরে নার্সের দেহ পেয়েছে। সাক্ষী মালিককে অত্যাচার করেছিল? ছেলে টিকিট পেয়েছে৷ বাংলাতে বিচার হয়। আপনাদের শাসিত রাজ্যে বিচার হয় না। দোষীদের নিকৃষ্টতম শাস্তি হোক আমরা চাই।’
তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘বাম, বিজেপি রবিবার অবধি অপেক্ষা করতে পারতেন। তা নয় মঙ্গলবার আপনারা আদালতে চলে গেলেন। পুলিশ ৯০ শতাংশ এভিডেন্স কানেক্ট করেছিল। পুলিশ যা তদন্ত করেছে তার ভিডিও বাবা-মা’কে দেখিয়ে এসেছে। আমি রবিবার অবধি সময় দিয়েছিলাম। আমি পরিবারকে দোষ দিইনা। আপনাদের সহ্য হল না। আপনাদের দাবি কী? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশের সামনে অপমান করতে হবে।’
এদিন আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়েও মুখ খোলেন মমতা৷ সরাসরি আঙুল তোলেন বাম এবং বিজেপির দিকে? তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমি জানি আরজি করে ভাঙচুর চালিয়েছে সিপিএম-বিজেপি। সিপিএম-এর ডিওয়াইএফআইয়ের পতাকা ছিল। আর বিজেপি নিয়েছিল জাতীয় পতাকা। জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম আছে। জাতীয় পতাকা নিয়ে গুন্ডাগিরি হয় না। আমাকে ধমকাবেন, চমকাবেন না। আমরা নিজেরা জিতে আসিনি। আমাদের নির্বাচিত করেছেন জনগণ। বাংলায় কোনও ঘটনা ঘটলে প্রশাসন তা সামলাতে পারে। সমস্যা সামলাতে তারা পারে৷ যান আগে দেশ সামলান৷’
এখানেই শেষ নয়, বিরোধীদের লক্ষ্য করে মমতার হুংকার ‘আমাকে মারবেন?আমাকে গুলি করে মারুন। আপনি জায়গা বলুন। আমি একা যাব। আমার সাথে পুলিশ থাকবে না। কী ভাবছেন আমাকে সরালেই, ফাঁকা জায়গা পেয়ে যাবেন?আর জি কর কাণ্ডের দোষীর ফাঁসির দাবিতে করা মিছিল শেষে মঞ্চে উঠে ঠিক এভাবেই বিরোধী বাম-বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এরই পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমোর অভিযোগ, সামনেই ৬টা উপনির্বাচন, তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে সন্দেশখালির মতো এবারও রাজনীতি করতে চাইছে বিরোধী বাম-বিজেপি৷ শুধু তাই নয়, বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘গুলি চালানোর উস্কানি’ দেওয়ার অভিযোগও তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷
বিরোধীদের নিশানা করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে আমার জন্ম। আন্দোলনেই আমার মৃত্যু হবে। ক্ষমতা থাকলে রাজা থেকে দিল্লির নেতা আমার গায়ে টাচ করে দেখাক।’ এর পাশাপাশি বিরোধীদের নিশানা করে তাঁর অভিযোগ, ‘সামনে ছটা উপনির্বাচন আছে। তাই এই সব করেছেন। দেখেছিলেন তো সন্দেশখালি নিয়ে কী করেছিলেন। ইলেকশনে জেতার জন্য। মনে রাখবেন কলকাতা পুলিশের সব রিপোর্ট সিবিআইয়ের হাতে গেছে। সারারাত আমি জেগেছিলাম যতক্ষণ না শান্তি আসে।’ এরই পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমোর জোরাল কটাক্ষ, ‘আপনারা কি ইনসিস্ট করছেন গুলি চালানোর জন্য? গুলি চালাবে না। এটা জ্যোতিবাবু,বুদ্ধবাবুর পুলিশ নয়৷ নিজেদের সংশোধন করুন। অনেক পাপ করেছেন। আর করবেন না। নিজেদের আয়নায় মুখ দেখুন৷’