হার্ট ভাল রাখতে শুধু মাছ নয়, খান মাছের তেলও

বাঙালির মৎসপ্রীতি কারও অজানা নয়। আর সেই কারণেই কোনও বাঙালি পৃথিবীর যে গোলার্ধেই থাকুন না কেন, মাছের খোঁজে ঠিক বেরিয়ে পড়েন। এবার কাজের কথাটা বলেই ফেলি। বাঙালির এহেন ‘মৎস প্রীতি’-তে খুশিই হন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তাঁদের বক্তব্য, মাছে রয়েছে পুষ্টির ভাণ্ডার। ফলে নিয়মিত মাছ খেলে একাধিক ছোট-বড় রোগের ফাঁদ এড়ানো যায়।

শুধু মাছ কেন এর পাশাপাশি মাছের তেলও খেতে দারুণ। ঠাকুমা-দিদামাদের কথায়, শুধু স্বাদ নয়, মাছের তেল নাকি খাদ্যগুণেও ভরপুর। তাই নিয়মিত এই খাবার খেলে নাকি হার্টের একাধিক রোগকে আরামসে এড়ানো যায়।

এই প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, মাছের তেল এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাণ্ডার। ফলে মাছের তেল খেলে দেহে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় নিমেষেই। আর এই ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে। বিশেষ করে, মস্তিষ্কের বিকাশ থেকে শুরু করে রেটিনার গঠন, এমনকী মেনস্টুরাল পেইন কমানোর কাজে এর জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই নয় প্রেগন্যান্সির সময় ছোট-বড় একাধিক অসুখকে বাইপাস করে শরীরকে সুস্থ রাখতেই সাহায্য করে মাছের তেল। তাই রোজকার ডায়েটে থাকলে ক্ষতি তো নেই, বরং বেশ কিছু উপকারই মেলে।

সঙ্গে মাছের তেলে রয়েছে ডিএইচএ এবং ইপিএ। আর এই দুই উপাদান যে হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তা ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন। আসলে এই দুই উপাদানের গুণেই দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং ভালো কেলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এছাড়া হাই ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও মাছের তেলের জুড়ি মেলা ভার। তাই তো মাছের তেল খেলে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওরের মতো ঘাতক রোগের হাত থেকেকিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যায়।

অনেকেই মনে করেন, দেশি রুই, কাতলা, মৃগেলের তেল খেলে এই ধরনের উপকার নাও মিলতে পারে। এই ধরণা কিন্তু একেবারে ভুল। একই মত পুষ্টিবিদেরও। দেশি মাছের তেল খেলেও  একাধিক উপকার পাওয়া যায়। রুই, কাতলা, ভেটকি সহ প্রায় সব মাছেই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি। তবে ভেটকি আর ইলিশের তেল কিন্তু সবথেকে বেশি উপকারী। এই দুই মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি মজুত থাকে। ফলে ভেটকি আর ইলিশের তেল খেলে উপকার মিলবেই। তবে এটাও ঠিক যে, দেশি মাছের তুলনায় টুনা, সার্ডিন, হেরিং-এর মতো বিদেশি মাছের তেল খেলে উপকার মিলবে অনেক বেশি। তাই পকেটের জোর থাকলে মাঝেমধ্যে এই ধরনের মাছ খাওয়া যেতেই পারে।

এখানে আরও একটা তথ্য দিয়ে রাখা জরুরি। দেহে ওমেগা থ্রি-এর ঘাটতি মেটাতে চাইলে আপনাকে প্রতিদিন অন্তত ১০০ গ্রাম মাছ খেতেই হবে। তবে এভাবে গ্রামের হিসাব কষে তো মাছ খাওয়া সম্ভব নয়। সহজ ভাষায় বললে, দিনে মাঝারি সাইজের দুই পিস মাছ খেলেই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। এমনকী এই পরিমাণ মাছ খেলে দেহে প্রোটিনের চাহিদাও মিটবে।শুধু মাছ খেলে কিন্তু তেমন একটা উপকার মিলবে না। খেতে হবে মাছের তেলও। এক্ষেত্রে মাছের তেল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সেই তেলই বিভিন্ন সুস্বাদু পদে ব্যবহার করতে পারেন। আলু, পটল, ফুলকপি, বাঁধাকপি বা যে কোনও সবজি এই তেল দিয়েই রান্না করতে পারেন। এমনকী মাছের তেলেই ভেজে নিতে পারেন মাছও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × five =