তিলোত্তমার বিচার চেয়ে মুখর হল রাজপথ

‘তিলোত্তমা’র বিচারের দাবিতে রবিবারে মুখর হয়ে ওঠে রাজপথ। একদিকে ‘আমরা তিলোত্তমা’র ব্যানারে রাজপথে প্রতিবাদের গর্জন শোনা যায় এদিন। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলায় এদিন বিশাল মিছিল বের হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা পথে নামে এদিন। ছিলেন একাধিক তারকাও। ছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। নাগরিক সমাজের এই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন পরিচালক অপর্ণা সেন, অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, উষসী চক্রবর্তী, চৈতী ঘোষাল, সুদীপ্তা চক্রবর্তীর মতো সেলেবররা।  এদিনের এই মিছিল থেকে অপর্ণা সেন বলেন, ‘আমরা যেন সেই ফাঁদে না পড়ি। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করছে। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে, ছিঃ। অন্তর থেকে ধিক্কার জানাচ্ছি।’ আরজি কর কাণ্ডে দোষীর শাস্তি চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা করদাতা। কেন আমরা আমাদের দাবি ছাড়বে? আশা করছি জাস্টিস পাব। যদি দরকার হয় আবার পথে নামব।’ সুপ্রিম কোর্টের উপর ভরসা রয়েছে বলেও জানান অপর্ণা সেন।

অন্যদিকে, অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এ দিনের মিছিল থেকে প্রশ্ন তোলেন, ‘আমি বারবার বলে এসেছি যে কলকাতায় আমরা সুরক্ষিত। কিন্তু আরজি করের ঘটনা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ২৩ দিন কেটে গেল। মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা নাগরিকরা মানতে পারছি না এই নৃশংস কাণ্ড একজন ঘটিয়েছে। কেন নির্যাতিতার বাবা-মাকে প্রথমে বলা হল যে মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন? প্রশ্ন অনেক। কেন আমরা এত অন্ধকারে রয়েছি? সিবিআই তদন্ত কতদূর এগিয়েছে আমরা জানতে পারছি না। মেয়েটির বাবা-মার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। পুলিশ-সরকারের কাছে গিয়ে যদি ন্যায়বিচার না পাই, তাহলে কোথায় যাব?মুখ্যমন্ত্রী একটা বিহিত করে দেখান।’ এরই পাশাপাশি চৈতী ঘোষাল বলেন, ‘আজ কোনও সেলিব্রিটি হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এই মিছিলে যোগ দিয়েছি। আমরা জাস্টিস চাই।’  এদিনের এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মাথায় বেগুনি ফেট্টি উপরে লেখা ছিল ‘তিলোত্তমা’। অন্যদিকে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের রানু ছায়া মঞ্চের সামনে থেকেও এদিন মিছিল শুরু হয়। এদিন মিছিলও যাবে ধর্মতলা পর্যন্ত। মিছিল শুরু আগে পথনাটিকার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়। তাঁদের গলায় শোনা যায়, ‘উই শ্যাল ওভার কাম’। চলে স্ট্রিট পেন্টিংও।

কলেজ স্কোয়ারে মিছিলের ভাষা যেমন স্লোগানে স্লোগানে ধ্বনিত হচ্ছে, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে প্রতিবাদের ভাষা ছিল গান আর ছবি। এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘প্রতিদিন ধর্ষণ হচ্ছে। কোনওটা জানতে পারছি, কোনওটা জানতে পারছি না। কোনগুলো জানতে পারছি না সেগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে।’ অভিনেত্রী সোলাঙ্কি রায়কেও এদিন এই প্রতিবাদে সামিল হতে দেখা যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘২২ দিন হয়ে গেল। আর কবে? বহু মানুষ যুক্ত এই ঘটনায়। অথচ কোনও সুরাহা নেই। দাবি একটাই, সেই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মানুষ রাস্তায় থাকবে।’

এদিন প্রতিবাদ মিছিল করেন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনীরাও। মৌন মিছিল করেন তাঁরা। গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে থেকে নন্দন অবধি এই মিছিল বের হয়। রাজ্যের যত রামকৃষ্ণ মিশন আছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীরা সমবেত হন এদিন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 16 =