সারা রাত গানে গানে প্রতিবাদের ঝড় তুললেন জুনিয়র ডাক্তাররা

সোমবার এ এক অন্য রাত দেখল বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট। স্টেথো সরিয়ে সারা রাত গানে গানে প্রতিবাদের ঝড় তুললেন জুনিয়র ডাক্তাররা। উঠেছে স্লোগানও। ব্যারিকেডের সামনে ‘হল্লা বোল’ চিকিৎসকদের। দাবি একটাই, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে এসে দেখা করতে হবে তাঁদের সঙ্গে। বিশাল সব ব্যারিকেড। একধারে ধরনায় বসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। অপরপ্রান্তে চেয়ারে রাতভর চেয়ার পেতে ঠায় বসে উর্দিধারী পুলিশও। সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সকাল। ১৬-১৭ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। লালবাজারের সামনে বসে জুনিয়র ডাক্তাররা।

এর আগে সোমবার দুপুরে কলকাতাবাসী দেখেছে জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযান, পুলিশের রুখে দেওয়া এবং রাতভর জুনিয়র চিকিৎসকদের ধরনা। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে একটানা ধরনায় ডাক্তাররা। সোমবার রাতভর ধরনার পর মঙ্গলবার সকালেও রাস্তাতেই বসে তাঁরা। সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারি খুশি তাঁরা ঠিকই তবে সন্দীপের গ্রেফতারি আরজি করে দুর্নীতি মামলায়। ডাক্তারি পড়ুয়া ধর্ষণ-খুন মামলার কালপ্রিটদের গ্রেফতার করার দাবিতে অনড় তাঁরা। কোনওভাবেই অবস্থান প্রত্যাহার নয়, সাফ জানিয়ে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবারই তাঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৩৬ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা অবধিও টানা ডিউটি করেন তাঁরা। ফলে এই অবস্থান চলবে। সারা রাত রাস্তায় বসে থাকা এক জুনিয়র ডাক্তার স্পষ্ট বলেন, ‘বিনীত গোয়েল পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। প্রথমে পুলিশ প্রশাসন বলেছিল সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন করে। আমরা একবারও ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করিনি, তা টপকাতেও যাইনি। কিন্তু আমাদের সেসব দিয়েই ঘিরে রাখা হয়েছে। আমরা তো ডাক্তার, অপরাধী নই।’

এর আগে সোমবার লালবাজার অভিযান ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে পুলিশ কমিশনার বা সিপির পদত্যাগ দাবি করেন তাঁরা। মিছিল করে সোমবার লালবাজারমুখী হলেও লালবাজারের অনেক আগেই আটকে যান তাঁরা। ফিয়ার্স লেনে ৯ ফুট উঁচু লোহার ব্যারিকেড, পুলিশে ছয়লাপ ছিল ওই চত্বর। ব্যারিকেডেই মিছিল থামিয়ে দেয় পুলিশ। এরপরই পুলিশ-ডাক্তারদের কথা কাটাকাটি শুরু। দাবি, একটাই, হয় লালবাজার যেতে দিতে হবে বা সিপিকে এসে কথা বলতে হবে।

পাল্টা পুলিশ দাবি করে, ২০ জনের তালিকা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। সেই ২০ জন যেতে চাইলে কোনও আপত্তি নেই। সকলকে একসঙ্গে যেতে দেবেন না। ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সকাল থেকে ২০ জনের তালিকা দিয়েছিলেন। আমরা জানতাম ২০ জনই আসবেন। এখানে এসে সম্ভবত ওনারা অন্য কিছু ঠিক করছেন।’

এদিকে রাতে ঘটে এক ঘটনা। রাত তখন প্রায় ৩টে ৪৫ মিনিট। হঠাৎই জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শুরু করেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। ভোরের আলো ফোটার আগে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট শুনছে ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্যবিধাতা।’ জাতীয় সঙ্গীত শুনেই ধড়মড় করে উঠে দাঁড়ান পুলিশ কর্মীরা। জাতীয় সঙ্গীত শেষ হতেই আন্দোলনকারীদের বলতে শোনা যায়, ‘এতদিনে পুলিশ সোজা হয়ে দাঁড়াল।’ এরপরে আন্দোলনকারীরা পুলিশকর্মীদের দিকে জলের বোতল, বিস্কুট বাড়িয়ে দেন। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, পুলিশও মানুষ, ডাক্তারও মানুষ। সেই মনুষ্যত্বের কারণেই পাশে থাকার চেষ্টা। রাতভর গান, প্যারোডিতে জেগে থাকল বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট।

রাত পেরিয়ে মঙ্গলবার সকালেও পথে বসে জুনিয়র ডাক্তাররা। কেউ কেউ গাইছেন, ‘পথে এবার নামো সাথী পথে হবে এ পথ চেনা’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − nine =