কাঞ্চনের কথার জেরে সরকারি পুরস্কার ফেরত নাট্য়কার চন্দন সেন ও বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের

আরজি করের ঘটনায় যে সব জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন সেই সব আন্দোলনকারীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন তৃণমূলের বিধায়ক ও অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। তিনি দাবি তোলেন যে ‘যারা কর্মবিরতি করছেন বা শাসক দলের বিরুদ্ধে বলছেন তারা সরকারি বেতনটা নিচ্ছেন তো? নাকি নিচ্ছেন না? পুজোর বোনাসটা নেবেন তো? আমাদের শিল্পী যারা আছেন, তাঁরা যাঁরা সরকারি পুরস্কার ইত্যাদি নিয়েছিলেন তাঁরা ফেরত দেবেন তো? বলুন ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।’

কাঞ্চনের এই মন্তব্যের পরেই রাগে ফেটে পড়েন তাঁর থিয়েটার ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা বন্ধুরা। সোমবার তার জেরেই বন্ধুত্ব ত্যাগ করেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁকে ধিক্কার জানান বিদীপ্তা চক্রবর্তী, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই। মঞ্চে কাঞ্চনের সঙ্গে অভিনয় করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। এরপর মঙ্গলবার সকালে সরকারি পুরস্কার ফেরত দেন নাট্য়কার চন্দন সেন ও বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার সকালেই জানা যায় যে ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার থেকে প্রাপ্ত নাট্য রচনায় সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার’ ফিরিয়ে দিচ্ছেন চন্দন সেন। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তাকে মেইল করে জানান মঙ্গলবারই পুরস্কার স্মারক এবং সাম্মানিক মূল্য ২৫০০০ টাকা তিনি ফিরিয়ে দেবেন। নাট্যকার জানিয়েছেন, বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক সরকারি পুরস্কার গ্রহণ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁকে আঘাত করেছে এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে থেকে সমর্থন জানাতে তাঁর এই বার্তা।

একই সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়, প্রাচ্য নিউ আলিপুরের নাট্যকার বিল্পব বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাদেমির সচিবকে মেইল মারফত তিনি জানান যে ‘১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শিশির মঞ্চে আমি আমার নির্দেশিত প্রযোজনা ‘দায় আমাদেরও’র জন্য সেরা নির্দেশক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হই। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আরজি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনা এবং সেই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও দলদাস পুলিশ প্রশাসনের কার্যকলাপ একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমাকে লজ্জিত এবং একজন মানুষ হিসেবে ক্ষুব্ধ করেছে। সত্যকে আড়াল করতে প্রশাসনের এই নির্লজ্জ তৎপরতা আমি ঘৃণা করি।’

এখানেই শেষ নয়, মেইলেই নাট্যকার লেখেন, ‘আমার একদা নাট্যবন্ধু তথা অধুনা শাসকদল সমর্থিত নির্বাচিত বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের ‘সরকারি পুরস্কার ইত্যাদি’ ফেরৎ দেওয়া সংক্রান্ত বিবৃতির পর আমার কাছে সরকার প্রদত্ত পুরস্কারটি বোঝা বলে মনে হচ্ছে। শাসকের প্রতিনিধি কাঞ্চনবাবুর কথাতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এই পুরস্কার তাদেরই রাখা উচিত যারা শাসকের এই দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ এবং শাসকের পোষ্য পুলিশ-প্রশাসনের চাটুকারিতাকে নপুংসকের মত মান্যতা দেবে; কোন প্রতিবাদ করবে না। যোগ্যতা নয় আসলে মেরুদণ্ডের বিনিময়ে সরকারের এই পুরস্কার।  তাঁর কথার মধ্যে প্রকট সরকারের এই সুপ্ত বার্তা আমি পুরস্কার গ্রহণকালে বুঝিনি। বুঝলে এই পুরস্কার আমি কখনই গ্রহণ করতাম না। সরকার আসলে এই পুরস্কারের বিনিময়ে আমার প্রশ্নহীন আনুগত্য চেয়েছিল। সেই আনুগত্যের চাহিদা এবং এই পুরস্কার দুটোই আমি আজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। পুরস্কার মূল্য বাবদ প্রাপ্ত ত্রিশ হাজার টাকাও আমি ফেরত দিচ্ছি। দয়া করে গ্রহণ করে আমায় কৃতার্থ করবেন। শাসকের পুরস্কার এবং পুরস্কার মূল্যের চেয়ে আমার মেরুদণ্ড আমার কাছে একটু হলেও বেশি দামি। ওটা আপাতত আমার কাছেই রাখলাম।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × five =