দ্য নাজ ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর সোশাল ইনোভেশন এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার (ভারত সরকার) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডিসিএম শ্রীরাম ফাউন্ডেশন, ডিসিএম শ্রীরাম অ্যাগওয়াটার চ্যালেঞ্জের অন্তর্বর্তী মূল্যায়ন ঘোষণা করল। ২০২৩ সালের জুন মাসে লঞ্চ হওয়া এই চ্যালেঞ্জ ১৪টি যুগান্তকারী প্রযুক্তিকে একত্র করেছে। এর লক্ষ্য ভারতের ছোট জমির কৃষকদের জল ব্যবহারের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। বিশেষ করে সেই কৃষকদের যাঁরা ধান, গম, আখ ও সুতির চাষ করেন।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ডিসিএম শ্রীরাম ফাউন্ডেশন উদ্ভাবন এবং যেসব অভ্যাস বড় আকারে জল সংরক্ষণ করে তার প্রচারের মাধ্যমে কৃষিতে জলের অদক্ষ ব্যবহারের বর্তমান পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বদ্ধপরিকর। দ্য/নাজ প্রাইজের মূল লক্ষ্য হল এমন সমাধানে জোর দেওয়া ভারতের জনসংখ্যার নিচের ৩০ শতাংশের জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জগুলি দূর করতে পারে। বিশেষ করে এর মধ্য়ে রয়েছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের সমস্যাগুলি।
গত দশমাসে এই প্রযুক্তিগুলি ভারতের একাধিক কৃষি-জলবায়ু অঞ্চলে প্রয়োগ করা হয়েছে। লক্ষ্য দেশের সবচেয়ে কঠিন কৃষি চ্যালেঞ্জগুলির কয়েকটির মোকাবিলা করা। স্বাধীন থার্ড পার্টি ইভ্যালুয়েটর ইকোশিয়েট কনসালট্যান্টসের সঙ্গে জুটি বেঁধে দ্য নাজ প্রাইজ টিম একটি সার্বিক অন্তর্বর্তী মূল্যায়ন করেছে। তাতে এক কঠোর জুরি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চারটি অগ্রসর সংগঠনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা এই চ্যালেঞ্জের ফাইনাল স্তরে মুখোমুখি হবে।
যে চারটি সংগঠন চ্যালেঞ্জের ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছে তাদের প্রত্যেককে ১৫ লক্ষ টাকা করে মাইলস্টোন গ্রান্ট দেওয়া হবে। এগুলির মধ্যে আছে EF Polymer – মৃত্তিকার জলধারণ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে বায়ো-ইনপুট বিশেষজ্ঞ, CultYVate – চাষের কাজে জলের ব্যবহার যতদূর সম্ভব অপচয়হীন করার ব্যাপারে উন্নততর পরামর্শ পরিষেবাদাতা, Industill – যথাযথ জলের ব্যবহারের জন্য সেচব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণে উদ্ভাবন কাজে লাগায় আর Phyfarm – কৃষিকাজে জলের আরও দক্ষ ব্যবহার বড় আকারে করার মত সমাধান তৈরি করে।
মোট ৬০ লক্ষ টাকা এই ফাইনালিস্টদের দেওয়া হবে। এই প্রত্যেকটি সংগঠন এখন মন দেবে সাধ্যমত দামে নিজেদের প্রযুক্তিকে এমনভাবে তৈরি করার উপরে, যাতে ছোট জমির কৃষকদের জল ব্যবহারের দক্ষতা এবং লাভ করার ক্ষমতা বাড়ে। এই চ্যালেঞ্জের শেষ পর্যায় চালু হবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এবং বিজয়ী ঘোষণা হবে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সবচেয়ে প্রভাবশালী ও আকার বৃদ্ধির যোগ্য উদ্ভাবনকে ২ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সুস্থায়ী কৃষি সমাধানের জন্য যেসব অনুদান দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম এই অনুদান।
এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অমন পান্নু, প্রেসিডেন্ট, ডিসিএম শ্রীরাম ফাউন্ডেশন, বললেন ‘ডিসিএম শ্রীরাম অ্যাগওয়াটার চ্যালেঞ্জ হল এক জরুরি উদ্যোগ, যার লক্ষ্য কৃষিক্ষেত্রের জল সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করা। বিশেষ করে ছোট জমির চাষিদের জন্যে, যাঁরা ভারতের কৃষি অর্থনীতির মেরুদণ্ড। অন্তর্বর্তী মূল্যায়ন এমন বহু যুগান্তকারী উদ্ভাবনের সম্ভাবনা তুলে ধরেছে যেগুলো জল সংরক্ষণ ও বর্ধিত উৎপাদনশীলতায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছে। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া খুবই অনুপুঙ্খ ছিল। চলেছে দুমাসের বেশি সময় ধরে এবং আটটি রাজ্য জুড়ে ফিল্ড ভিজিট করা হয়েছে। এই ভিজিটগুলোর মধ্যে ছিল নির্বাচিত প্রযুক্তিগুলো কতটা কাজে লাগছে তার ক্ষেত্র সমীক্ষা। তার জন্যে কয়েকশো কৃষকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে উদ্ভাবনগুলোর প্রভাব ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে। আমি চার বিজয়ী সংগঠনকে অভিনন্দন জানাতে চাই এই সমস্যার সমাধান করা এবং মাইলস্টোন গ্রান্ট পাওয়ার জন্যে। আমরা চূড়ান্তে পর্যায়ে যাচ্ছি। এই সময়ে এই প্রযুক্তিগুলোকে বড় হতে দেখে এবং দেশজুড়ে কয়েক মিলিয়ন কৃষকের জীবনে স্পষ্ট প্রভাব ফেলতে দেখে আমরা আনন্দিত।’
এর পাশাপাশি কণিষ্ক চট্টোপাধ্যায়, ডিরেক্টর, দ্য নাজ প্রাইজ বললেন ‘চাষের কাজে জল ব্যবহারে দক্ষ উদ্ভাবন ভারতে ছোট জমিতে চাষের ভবিষ্যতের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। খেতে জল পেতে যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হতে হচ্ছে তার সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়ে থাকলেও প্রান্তিক চাষিদের জন্য সাশ্রয়কর এবং নাগালের মধ্যে থাকা মডেল এখনো বিরল। ডিসিএম শ্রীরাম অ্যাগওয়াটার চ্যালেঞ্জের অন্তর্বর্তী মূল্যায়ন দেখিয়ে দিয়েছে যে কার্যকরী, বড় আকারে প্রয়োগ করার মত এমন সমাধান রয়েছে, যেগুলো আমাদের চাষিরা জমির উৎপাদনশীলতা, দাম এবং বাজারের অনিশ্চয়তার ফলে যে জটিল জলের সমস্যায় ভোগেন তার সমাধান করতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে অ্যাগটেক এই সমস্যাগুলোর সমাধানের দ্রুত উদ্ভাবন, প্রদর্শন এবং প্রয়োগে উৎসাহ দিতে পারে। এই উদ্ভাবনগুলোর ক্ষমতা আছে কৃষিক্ষেত্রে জল ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি করে সারা ভারতের ১৫০ মিলিয়নের বেশি ছোট জমির কৃষকের জীবনযাত্রার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটানোর।’
প্রতিযোগী সংগঠনগুলির সঙ্গে বিস্তারিত কথোপকথন চালিয়েছিল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এক জুরি প্যানেল, যার মধ্যে ছিলেন হেমেন্দ্র মাথুর (ভারত ইনোভেশন ফান্ড), অরুণা পহল (আইএফএইচডি), বিলাস শিন্ডে (সহ্যাদ্রি ফার্মস) এবং এমানুয়েল মারে (ক্যাস্পিয়ান)। এই প্যানেল এই প্রযুক্তিগুলির জল ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর এবং ভারতের ছোট জমির চাষিদের মধ্যে এগুলির বৃহত্তর ব্যবহারের ক্ষমতার মূল্যায়ন করে।