আরজি করের ঘটনায় যে দিন মামলার দায়িত্বভার হাতে পায় সিবিআই, ঠিক তার আগেই ‘প্লেস অফ অকারেন্স’ অর্থাৎ সেমিনার রুম চত্বর সংস্কারের নামে ভাঙা হয়। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চার তলার সেমিনার হল এখন এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঘটনাস্থল যেখানে, সেই ঘর আর তার পাশের ঘর ভাঙতে হঠাৎই উদ্যোগী হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ! হঠাৎ কেন এই উদ্যোগ বা কার নির্দেশেই এই ভাঙার কাজ শুরু হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এই প্রসঙ্গে বিশেষ সূত্রে খবর মিলছে, সেমিনার রুম চত্বর ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-ই।
সামনে এসেছে পিডব্লুউডি-কে দেওয়া পারমিশন লেটার। চিকিৎসকদের অন ডিউটি রুম-শৌচাগার ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। সেই নির্দেশনামায় সই রয়েছে সন্দীপের। আর নির্দেশনামা ১০ অগাস্টের। তিলোত্তমা খুন হন ৮ অগাস্ট মধ্যরাতে। তাহলে কীভাবে এত বড় ঘটনার পর ভাঙার নির্দেশ দিলেন সন্দীপ তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
আরজি করের সেমিনার রুম কার নির্দেশে ভাঙা হয়েছে, সে প্রশ্ন ওঠে আদালতেও। নির্দেশনামায় দেখা যাচ্ছে, সন্দীপ ঘোষ পূর্ত বিভাগের সিভিল ও ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যেখানে এত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তারপর কীভাবে ক্রাইম সিন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হল তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
নির্দেশনামায় উল্লেখ করা রয়েছে, ১০ অগাস্ট প্ল্যাটিনাম জুবলি বিল্ডিংয়ে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েকের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই মতো নির্দেশ দিয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও নির্দেশনামার বয়ান এমনভাবে রয়েছে, যাতে সন্দীপ ঘোষ বন্দুক রাখছেন স্বাস্থ্যভবনের কাঁধেই। এদিকে আবার সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই সিবিআই উল্লেখ করেছে, প্লেস অফ অকারেন্স থেকে তথ্য প্রমাণ লোপাট হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্লেস অফ অকারেন্স ভাঙার নির্দেশও সম্পর্কিত। আদালতে ইতিমধ্যেই বিষয়টি উল্লেখ করেছে সিবিআই।
এই প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটার পর থেকে ধামাচাপা দেওয়ার যে চেষ্টা, তথ্য প্রমাণ লোপাটের যে চেষ্টা, সন্দীপ ঘোষ-সহ পুরো সিন্ডিকেট। যারা সাস্থ্য ব্যবস্থায় রাজ চালিয়ে আসছিলেন, যে নামগুলো সামনে আসছে, তাঁরা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত। আমরা প্রথম থেকে দাবি করেছিলাম, কলেজ কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’