শিক্ষক দিবসে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ এনএসকিউএফ শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের

এবারের শিক্ষক দিবসের ছবিটা রাজ্য জুড়ে ছিল কিছুটা ভিন্নই। একদিকে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে যেমন নানা অনুষ্ঠান হয়েছে ঠিক তেমনই তার একট বিপরীত ছবিও ধরা পড়ছে নানা জায়গায়। তার প্রধান কারণ দুটো। প্রথমত, আরজি করের ঘটনা এবং দ্বিতীয়ত যে আন্দোলন চলছে কলকাতা সহ নানা জায়গায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকে ঘিরে। আর এই আন্দোলন যাঁরা করছেন তাঁদের মধ্যে একাংশ রয়েছেন এনএসকিউএফ শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টরা। তাঁদেরকে এদিন দেখা যায় হাওড়া সরকারি বাসস্ট্যান্ডে বাটি হাতে ভিক্ষাবৃত্তি করতে। প্রতীকী প্রতিবাদ। তবে নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। মূলত রাজ্যের ১৬১১ টি সরকার ও সরকার পোষিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৬ টি বিভিন্ন বৃত্তিমূলক বিষয়ে ( যেমন – ইনফরমেশন টেকনোলজি, হেল্থ কেয়ার, অ্যাপারেল, প্লাম্বিং, ফুড প্রসেসিং, কনস্ট্রাকশন ইত্যাদি) যে ২৯০০ জন কর্মরত তাঁরাই এই প্রতীকী আন্দোলনে অংশ নেন।

এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ২০১৩ থেকে এই শিক্ষকদের সমগ্র শিক্ষা মিশনের অধীনে ‘ভোকেশনালাইজেশন অফ স্কুল এডুকেশন’-এর অন্তর্গত ন্যাশনাল স্কিলস কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (এনএসকিউএফ) প্রকল্পে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্থায়ী বিষয়গুলিতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দ্বারা অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়। তবে দীর্ঘ ১১ বছর এঁদের কোনওরকম বেতন বৃদ্ধি হয়নি বলে অভিযোগ। উপরন্তু ২১৮ জন যোগ্য ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের অন্যায়ভাবে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এদিকে এ অভিযোগও শোনা যাচ্ছে, দীর্ঘ ২ বছর ১১ মাস ধরে বেতনহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টরা । শিক্ষকদেরও মাসের বেতন মাসে সুনিশ্চিত নেই, ২ – ৬ মাস অন্তর বেতন হয়, কোনরকম সামাজিক সুরক্ষা নেই। এমনই এক প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শিক্ষক দিবসের দিন বাটি হাতে পথচলতি মানুষ, বাসে উঠে এবং রাস্তার দোকানদারের কাছে ভিক্ষা করে প্রতিবাদ করেন।

পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক এই প্রসঙ্গে জানান, ‘১১ বছরের জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে অবিলম্বে কর্মরত এনএসকিউএফ শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ, বেতন কাঠামো নির্ধারণ এবং অন্যায়ভাবে ছাঁটাই হওয়া যোগ্য ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের বেতন সহ পুনর্বহাল করতে হবে। এর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা দিয়ে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা বন্ধ করে সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারকেই পরিচালনা করতে হবে।’

এদিকে যাঁরা কর্মহীন হয়েছেন তাঁদের দাবি, যোগ্য হওয়া সত্বেও অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ফলে কাজটা তাঁরা ফিরে পেতে চান। ইতিমধ্যেই পরিবার নিয়ে একেবারে পথে বসেছেন তাঁরা। এরকম অনিশ্চয়তায় আৎ কতদিন কাটাতে হবে তাঁরা তা জানেন না। তবে এই ঘোর অনিশ্চয়তার অমানিশা থেকে মুক্তি পেতে চান তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × five =