আদালতকে ধন্যবাদ পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়ায়ঃ অভিষেক

‘আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি হাইকোর্টকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশে দিয়েছে বলে।’ ঠিক এই ভাষাতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েও মুখ খুলতে শোনা যায় তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘আমি সব জায়গায় বলেছি ১০০ শতাংশ মনোনয়ন হবে। এদিকে তাঁরা চলে যাচ্ছেন আদালতে। একদফায় ভোট হবে না ৫ দফায় ভোট হবে। তাঁরা চলে যাচ্ছেন আদালতে, কি না কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার। কেন্দ্রীয় বাহিনীতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন আপত্তি জানিয়েছে। কারণ, নির্বাচন কমিশন ভেবেছে যে ক্ষমতা হ্রাস করা হচ্ছে। সেই কারণে আদালতে গিয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিচারব্যবস্থা মনে করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছে। আমাদের অভিপ্রায় যদি খারাপ হত তাহলে তো দলের তরফ থেকে আমি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারতাম। কিন্তু আমি তো বলিনি।‘

এদিন এই কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গেই ত্রিপুরার উদাহরণও টেনে অভিষেক এও বলেন, ‘ত্রিপুরায় তো ২৫ বছর সিপিএম-এর ক্ষমতা ছিল। ত্রিপুরায় ১০ গুণ সন্ত্রাস হয়। বাংলায় যদি একটা ঘটনা ঘটে, ত্রিপুরায় ১০টা হয়। রাজ্য সরকার আদালতে চাইলে যেতে পারে। সেখানে দলের কোনও বক্তব্য নেই। দল ও রাজ্যসরকার পৃথকভাবে চলে।’

কথা ওঠে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়েও। যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ২০২১-এর নির্বাচনে ডিভিডেন্ড দিয়েছে তৃণমূলকে। এবার পঞ্চায়েতও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বড় হাতিয়ার তৃণমূলের। এই প্রসঙ্গেই অভিষেক বিদ্ধ করতে ছাড়েননি স্যাফ্রন ব্রিগেডকে। বলেন, ‘বিজেপি প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না, সে নাকি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেবে। এর থেকে হাস্যকর আর কী হতে পারে’, কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে ঠিক এই ভাষাতেই বঙ্গ বিজেপি সহ কেন্দ্রকে বিঁধতে দেখা গেল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরই রেশ ধরে অভিষেক এও বলেন, ‘আগে দিন তারপর বলুন। আমরা বলেছি করেছি। আমরা ভোট নেওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। সার্বিক উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করি। ৩৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হচ্ছে।’ এই প্রসঙ্গেই অভিষেকের প্রশ্ন, ‘৩৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সুকান্ত মজুমদার ৩৭ পয়সা দিয়েছেন কেন্দ্র থেকে? কাগজ দেখান, রাজনীতি ছেড়ে দেব।’

একইসঙ্গে প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসেরও সমালোচনা করেন অভিষেক। রাজভবনে পিস রুম খোলার প্রেক্ষিতে অভিষেকের পালটা প্রশ্ন, ‘পিস রুম, কন্ট্রোল রুম করমণ্ডল দুর্ঘটনার দিন খুললেন না কেন? নির্বাচন কমিশনের হাতে যদি রক্ত লেগে থাকে তাহলে মণিপুরে যে ৩০০ জন মারা গেল তার রক্ত কার হাতে লেগে আছে?’ এদিন নির্দলদের সাসপেন্ড প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, ‘এমন নয় যে সমস্ত নির্দলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যাঁরা তৃণমূলে ছিল, কিন্তু টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়েছেন, তাঁদের দল বিরোধী কাজের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেটা প্রথম দিন থেকে বলা হয়েছে। সেটাই করা হয়েছে।’ পাশাপাশি ভাঙড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভাঙড় বলে নয়, আমার চাই সব জায়গাতেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। ভাঙড়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা অবঞ্ছিত, না ঘটলে বেশি খুশি হতাম।‘

এরই পাশাপাশি এক হাত নিতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে লক্ষ্য করে। স্পষ্ট ভাষায় বিরোধী দলনেতাকে বিঁধে জানান, ‘শুভেন্দু অধিকারী ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। ম্যাথু স্যামুয়েলের থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছ।’ আর এখানেই প্রশ্ন, ‘অভিষেক বলেন, ‘যে লোকটা ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়, খবরের কাগজে টাকা মুড়িয়ে নেয়, তাকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ কেউ অফার করে? অজিত পওয়ার উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা রয়েছে, এ তো ৫ লাখ টাকাও ছাড়েনি। যত স্ক্যাম বাংলায় হয়েছে সারদা নারদা রোজভ্যালি, সবেতে ওর নাম আছে। উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ ওকে অফার করতে যাবে কেন? ওর রেট তো ৫ লাখ।’ এছাড়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ও ১০০দিনের কাজ সহ নানা প্রকল্পে বকেয়া টাকা আটকে রাখা নিয়েও এদিন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিতে দেখা যায় তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 5 =