মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবার হাওড়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাঁচ বছরের জন্য ঠিকাদারদের কাঁধে

চলতি বছরের জুন মাসে নবান্নের সভাঘরে একটি প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠক থেকে তিনি আঙুল তোলেন হাওড়া পুরনিগমের রাস্তার দুরাবস্থা নিয়ে। পাশাপাশি শহরের বেহাল পুরপরিষেবা নিয়েও নিজের ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায়। বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলেছিলেন, ‘এ বার কি আমাকে রাস্তা ঝাঁট দিতে বেরোতে হবে? শুধু উপর দেখলে হবে? নীচে দেখতে হবে না? রাস্তা দেখে না, আলো দেখে না! শুধু ট্যাক্স বাড়ানো আর লোক বসাচ্ছে! এ ছাড়া প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না! রথীন যখন চেয়ারম্যান ছিল, তখন হাওড়ার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। হাওড়ার অনেক রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকার জায়গা পর্যন্ত নেই। কোথাও জবরদখল হলে কেন পদক্ষেপ হচ্ছে না? জঞ্জাল পরিষ্কার হয় না। কোথাও আলো জ্বলছে তো জ্বলছেই। কোথাও কল থেকে জল পড়ছে তো পড়ছেই। এ সবের টাকা দেবে রাজ্য সরকার! জনগণ পরিষেবা না পেলে পুরসভা-পঞ্চায়েত রেখে লাভ কী? কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকলে সেটাও খুলে নিয়ে বিক্রি করে দেন অনেকে। তার জন্য কেন একটা সিস্টেম তৈরি হচ্ছে না? কেন জল অপচয় হচ্ছে? ‘অটোমেটেড’ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? কেউ টাকা খেয়ে, কেউ টাকা খাইয়ে এ সব করাচ্ছেন।’
পাশাপাশি তিনি হাওড়া পুরনিগমের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রশাসকমণ্ডলীকে জানিয়ে দেন, এবার থেকে শহরে রাস্তা নির্মাণ ও সারাইয়ের দায়িত্ব পাবে যে সব সংস্থা তাঁদের ঘাড়েই সেই রাস্তা অন্তত ৫ বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাবে। সেই শর্ত মেনেই রাস্তা নির্মাণ ও সারাইয়ের দায়িত্ব দিতে হবে ঠিকাদারদের।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই এখন হাওড়া পুরনিগম কর্তৃপক্ষ রাস্তা নির্মাণ ও সারাইয়ের জন্য যে নয়া দরপত্র ডাকতে চলেছে সেখানে প্রথম শর্তই রাখা হচ্ছে, যে ঠিকাদার এই রাস্তা সারাইয়ের দায়িত্ব নিতে চান তাঁকে আগামী ৫ বছর সেই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ দেওয়ার পিছনে যে যথেষ্ট কারণ আছে তা হাওড়াবাসী মাত্রই প্রত্যেকে জানেন। কেননা, শহরের বুকে পা রাখলেই দেখা যাবে, বছরখানেক আগে যে রাস্তা কোটি টাকা খরচ করে সারানো হয়েছে, বছর ঘুরতে না ঘুরতে সেই রাস্তা থেকে পিচের আস্তরণ উঠে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছোট-বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে। কিছু দিন আগে সারানো ঝাঁ-চকচকে রাস্তার অবস্থাও এতটাই বেহাল যে, যানবাহন চলাচল তো দূর, হাঁটাচলাই দায় হয়ে উঠেছে। ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস, বেনারস রোড, জি টি রোড, ফরশোর রোড, পঞ্চাননতলা রোড, আন্দুল রোড সর্বত্রইও বেহাল দশা। কোথাও তঈরি হয়েছে ১ ফুটের গর্ত, তো কোথাও ৮-১০ ফুট ব্যাসের গর্ত। এর সঙ্গে বৃষ্টি হলে তো আর কথাই নেই, জল জমে বিপজ্জনক হয়ে যায় সেই সব রাস্তা। বিপদে পড়েন আমজনতা।
এদিকে সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই হাওড়া পুরনিগম এলাকার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সারাইয়ের টেন্ডার ডাকতে চলেছে হাওড়া পুরনিগম। সেই টেন্ডারেই নিখরচায় রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। চুক্তিপত্রে পাঁচ বছর নিখরচায় রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি করা থাকবে পুরনিগমের। কিন্তু এই শর্ত মেনে কয়জন ঠিকাদার কাজ করতে এগিয়ে আসবেন, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু হয়ে গিয়েছে। কেননা এই ঠিকাদারদের দাবি, হাওড়া শহরের ভিতর দিয়ে প্রচুর ভারী যানবাহন চলে। যেই যানবাহণ চলাচল আটকানো না হলে রাস্তা কখনই টেকসই হবে না। সেই সঙ্গে রাস্তার নীচ দিয়ে যাওয়া বা পাশ দিয়ে যাওয়া জলের লাইন, টেলিফোনের লাইন, নিকাশির লাইন, বিদ্যুতের লাইনের জন্য বার বার রাস্তা খুঁড়তে হয়। সেই সব কাজ এই ঠিকাদাররা করেন না। করেন সেই সব কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য ঠিকাদাররা। তাই সেই সব কাজের দায়িত্ব কেন তাঁরাই বা নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − five =