হেনস্থার অভিযোগ জানাতে গিয়ে হোমে পাঠানো হল কিশোরীকে

এবার খাস কলকাতায় কিশোরীকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল। আরজি কর কাণ্ডে উত্তাল শহর। তার মধ্যেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবার আইনি প্যাঁচেও পড়তে হয় ওই কিশোরীকে। অভিযোগ, নিউ মার্কেটে ওই কিশোরীকে যৌন নিগ্রহ করেন এক হকার। এরপরই নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ জানাতে যান ওই কিশোরী। এদিকে বাবা, মা বাঁকুড়া থেকে না এসে পৌঁছনোয় বিপাকে পড়তে হয় ওই কিশোরীকে। অভিযোগ, ওই কিশোরী নাবালিকা হওয়ায় হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, অভিযোগ, কোনওরকমকাউন্সেলিংছাড়াইওইকিশোরীকেহোমেযেতেবাধ্যকরাহয়।

ওই কিশোরীর অভিযোগ, ‘নিউ মার্কেট থানায় গিয়ে আমি গোটা বিষয়টা জানাই। জিডি করা হয়। তারপর আমাকেই হেনস্থার শিকার হতে হল। রাত তখন ১০টা বেজে গিয়েছে। আমাকে বলা হয়েছিল, মেডিক্যাল করানোর পর পিজিতে ছেড়ে দেওয়া হবে। ছাড়েনি। উল্টে আমাকে হোমে নিয়ে যাবে বলে। বাবামা দূরে থাকে। ওখান থেকে আসতে ৬৭ ঘণ্টা সময় লাগবে। আমি থানায় অনুরোধ করি বাবা মা আসা অবধি অপেক্ষা করতে, রাজি হয়নি। পরে বলে রক্তের সম্পর্কের কেউ হলেই চলবে। সেইমতো কাকুকে খবর দিই। কিন্তু তারপরও ছাড়বে না বলে।

এদিকে কিশোরীর দাবি, বারবার তিনি বলেছিলেন, বাবা, মায়ের আসা অবধি অপেক্ষা করতে। শুনতে চায়নি বলে অভিযোগ। জোর করে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিশোরীর কথায়, ‘যা হল তাতে তো এবার মনে হবে বিপদে পড়লেও আর পুলিশে যাওয়ার দরকার নেই।এরই সূত্র ধরে কিশোরীর মায়ের কথায়, ‘আমরা পুলিশকে বললাম হোমে কেন পাঠালেন তা নিয়েও। সঙ্গে এটাও বলেন, এটুকু সময়ও দেবে না? ভুলের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেউ যদি এরকম হেনস্থার শিকার হন, কেউ কি প্রতিবাদ করবে? ভয়ে তো পিছিয়ে পড়বে।কিশোরীর বাবার কথায়, সাড়ে ৫টা থেকে রাত ২টো অবধি বসিয়ে রেখে মানসিক হেনস্থা করা হয়েছে। কেমন আইন, প্রশ্ন কিশোরীর বাবার?

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত বলেন, ‘অভিযোগকারী প্রাপ্তবয়স্ক না হলে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে তাঁকে অভিভাবকের হাতে তুলে দিতে হবে পুলিশকে। সেখানে বাবা, মাকে অভিভাবক হতে হবে এমনও নয়। কাকা এসেছেন, পরিচয়পত্র দেখাচ্ছেন, বাবা মায়ের কাছ থেকে বড়জোর ভেরিফাই করে নিতে পারত। থানায় অভিযোগ করতে গেলে কাউকে যদি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে ফ্রি মুভ করার যে মৌলিক অধিকার, তার বিরুদ্ধে কাজ হবে। আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েরা তো তবে রাস্তায় বেরোতেই পারবে না। পুলিশ ধরে নিয়ে বলবে, বাবা, মা আসতে পারছে না। তিন রাত হোমে গিয়ে থাকো।অন্যদিকে আইনজীবী সেলিম রহমানের বক্তব্য, ‘মেয়েটি একটি অভিযোগ করতে গিয়েছে, মেয়েটি নাবালক। পকসো আইনে বিষয়টি এগোবে। কিন্তু তাকে হোমে পাঠিয়ে দিলে তো অন্যরা ভয় পাবে। ভাববে অভিযোগ করতে গেলে হোমে পাঠিয়ে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =