পরিচয় মিলল নওশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা তরুণীর

ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে ‌যে তরুণী পুলিশে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন এবার সামনে এল তাঁর পরিচয়। তিনি মুর্শিদাবাদের ডোমকলের তৃণমূল নেত্রী। শুধু তাই নয়, শাসক দলের পদেও রয়েছেন। ডোমকল শহর কমিটির অন‌্যতম সাধারণ সম্পাদক। সঙ্গে এ খবরও মিলছে, ডোমকল শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বশেষ যে কমিটি ঘোষিত হয়েছিল, তাতে মোট পাঁচ জনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। তাতে চার নম্বরে নাম ছিল নওশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারিনী তরুণীর। জানা গিয়েছে, দলের তরফে তিনি রেশন ডিলারদের সংগঠন ও সেই সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় দেখভাল করতেন। শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের তিন দিন আগে বুধবার নিউ টাউন থানায় ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা তথা ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী। তাঁকে ‘সহায়তা’ করেছিলেন সল্টলেক পুরসভার চেয়ারম্যান তথা দলের তরফে ভাঙড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত। ওই অভিযোগকে গোড়াতেই ‘ষড়যন্ত্র’ বলে বর্ণনা করেছিলেন নওশাদ। তরুণীর ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ সামনে আসার পর নওশাদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে ডোমকলের এই তরুণীর রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আসতে একদম বদলে গেল ছবিটা। অ্য়াডভ্যান্টেজে নওশাদ।

ডোমকলের এই তরুণী অভিযোগ করেছিলেন, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে একটি অফিসে নওশাদ তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন। তার পরে একাধিক বার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেন বলে দাবি তাঁর। অভিযোগকারিণী ও তাঁর ভাই গিয়েবুধবার নিউটাউন থানায় নওশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁরা থানায় পৌঁছনোর খানিকক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যান বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরা সব্যসাচী।

তবে তৃণমূল স্বভাবতই বিষয়টিকে ‘রাজনীতি’র আঙিনা থেকে বিচ্ছিন্ন করেই দেখতে এবং দেখাতে চাইছে। তৃণমূলের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান অপূর্ব (ডেভিড) সরকার বলেন,’কিছু না হলে তো কেউ অভিযোগ জানাতে যায় না! সম্পর্কের ক্ষেত্রে দলীয় ভেদাভেদ দেখা উচিত নয়। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।’ তৃণমূলের অন্যান্য নেতাও একই কথা বলছেন। তাঁদের মতে, বিরোধী পক্ষের হলেই তো আর কারও অভিযোগের যথার্থতা ভুল হয়ে যায় না। সমস্ত কিছুর মধ্যে রাজনীতি টেনে আনা হবেই বা কেন! কিন্তু তাঁরা যা-ই বলুন, বিষয়টির মধ্যে রাজনীতি এসে গিয়েছিল প্রথম থেকেই। কারণ,অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি একজন রাজনীতিক। এখন দেখা যাচ্ছে, অভিযোগ যিনি করেছেন, তিনিও রাজনীতিক। তবে অভিযোগকারিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলেননি নওশাদ। ওই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে নওশাদ শুধু বলেছিলেন, তিনি ওই অভিযোগের জবাব দেবেন।

বৃহস্পতিবার নওশাদের পাশে দাঁড়িয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য ছিল’এই সব্যসাচী দত্তকেই মমতা (বন্দ্যোপাধ্যায়) কামদুনির আন্দোলন ভাঙতে পাঠিয়েছিলেন। এখন যখন ভাঙড়ে আরাবুল ইসলাম আর শওকত মোল্লা মিলে নওশাদকে ঠেকাতে পারছেন না, তখন এই নোংরা চিত্রনাট্য নিয়ে উনি নেমেছেন।’ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে নওশাদের বিরুদ্ধে এই মামলা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেও বিবিধ মতামত রয়েছে। শাসক দলের একটি অংশের মনে করছেন, এর ফলে উল্টে নওশাদকে আরও বেশি ‘রাজনৈতিক গুরুত্ব’ দেওয়া হয়ে গেল। অনেকে বলছেন, নওশাদের উপর এ ভাবে ‘চাপ’ তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশিই তাঁকে ‘বার্তা’ দেওয়া হচ্ছে যে, শাসকদলের সঙ্গে থাকলে এ সব ‘গোলমাল’ থাকবে না। অনেকেই মনে করছেন, বাগে আনতে না-পেরে নওশাদকে জোড়াফুল শিবিরে নেওয়ার জন্যই বিভিন্ন রাস্তা নেওয়া হচ্ছে। তার উপরে বৃহস্পতিবার অভিযোগকারিনীর ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ সামনে আসার পর সেই তত্ত্ব আরও জোরাল হয়েছে বলেই মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ। ফলে ঘটনা যাই ঘটে থাকুক না কেন, রাজনৈতিক অঙ্কের বিচারে বোধহয় অনেকটা অ্যাডভান্টেজ  পেয়ে গেলেন নওশাদই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 2 =