কোথায় গেল ইলিশের সেই মন ভোলানো স্বাদ!

বাজারে টাটকা ইলিশ আসতে শুরু করেও ইলিশ মুখে তুলে ভরছে না মন। এ যেন নামেই ইলিশ। সে স্বাদ উধাও। এটা শুধু এ বছর নয়।গত কয়েক বছর ধরেই এমনটা নজরে এসেছে কলকাতাবাসীর। এর পিছনে রয়েছে নাকি একাধিক কারণ।ন্যাশনাল ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের প্রাক্তন এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর মধুমিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘ইলিশের স্বাদ কমার পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়ন অন্যতম বড় কারণ। আর এই উষ্ণায়নের জেরে সমুদ্র ও নদীর জলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে জলের যে টেম্পারেচার থাকার কথা, তার থেকে অনেক বেশি থাকছে। তার প্রভাব পড়ছে ইলিশ-সহ সব মাছের জীবনচক্রে। ফলে কমছে টেস্ট।’ এদিকে রাজ্য প্রাণী ও মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ‘দ্য ডিরেক্টরেট অফ রিসার্চ, এক্সটেনশন অ্যান্ড ফার্মস’-এর সহ-অধিকর্তা বিমলকিঙ্কর চন্দ্র সামনে আনলেন আরও একটা কারণ।  ‘নদীতে বাঁধ নির্মাণ এবং মাঝখানে চড়া পড়ে যাওয়ায় পাহাড়ের মিষ্টি জল আসছে না। উল্টোদিকে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ায় নদীতে বেশি করে নোনা জল ঢুকছে। লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। ইলিশ মিষ্টি জলে ঢুকলে তবেই টেস্টি হয়। এখন আর সেটা হচ্ছে না।’

এই প্রসঙ্গে মৎস্যবিজ্ঞানী অশোক পট্টনায়েক জানান, ‘ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে নদীর দিকে আসার সময়ে খাওয়াদাওয়া বন্ধ রাখে ইলিশ। তাতে শরীরের সঞ্চিত ফ্যাট ভেঙে তেল তথা ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয়। সে জন্যই নদীর ইলিশ বেশি সুস্বাদু হয়। কিন্তু নানা কারণে বিভিন্ন নদ-নদীর জলের মিষ্টতা কমছে। নদীতে দূষণও বাড়ছে। তার জন্যই ইলিশের স্বাদ কমছে।’ সঙ্গে এও জানান, ‘কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ার পর থেকে ফ্লাইঅ্যাশের প্রভাবে রূপনারায়ণ নদীতে আগের মতো ইলিশ আসছে না। যে সব ইলিশ উঠছে তার স্বাদও অত্যন্ত খারাপ। আগে কলকাতার গঙ্গায় ইলিশ ধরা পড়ত। এখন আর সেটা দেখা যায় না।’

সুন্দরবন মত্‍স্যজীবী শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র জানান, ‘কোয়ালিটি ঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশে ছোট ইলিশ ধরা হয় না। ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করলে সেখানে জেল-জরিমানা হয়। আর ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজন না হলে সে ইলিশে স্বাদ থাকে না। কিন্তু আমাদের এখানে যে ইলিশ ধরা হয় তার গড় ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম। তাই স্বাদ ততটা ভালোও হয় না।’ এরই পাশাপাশি হিলসা সংস্থার প্রধান এবং মৎস্য ব্যবসায়ী অতুলচন্দ্র দাস জানালেন, ‘আমার দোকান থেকে অনেকে মেঘনা-পদ্মার ইলিশ কিনে নিয়ে যান। কিন্তু অনেকে বলেন, টেস্ট ভালো ছিল না। আসলে এখানকার মতো বাংলাদেশেও নদীর জল দূষিত হয়ে গিয়েছে। মিষ্টতা কমেছে। তাই ইলিশ আগের স্বাদ হারিয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =