ওপার বাংলায় হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদ। নিজের রোজগারের পরোয়া না করেই কলকাতার এক চিকিৎসক এবং মানিকতলার একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আপাতত বাংলাদেশি রোগী দেখা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল। আর এই সিদ্ধান্ত সমাজমাধ্যমে জানিয়েওছে তারা। এরপরই স্বাভাবিকভাবেই ভাইরাল হয় এই পোস্ট। চিকিৎসকদের পাশাপাশি এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানায় আমজনতার একাংশও। তবে একজন চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রোগীকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন কি না, তা নিয়েও বিতর্ক উসকে দেন কেউ কেউ।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউইটি)–র প্রবেশপথে রাস্তাতেই আঁকা হয়েছে একটি ভারতীয় পতাকার প্রতিকৃতি। ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেই পতাকার উপর দিয়ে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে-বেরোতে দেখা যায় একটি ছবিতে। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল সেই ছবি। সেই ছবিটি আপলোড করে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ তথা বন্ধ্যত্বরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল সাহা তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘বিইউইটি-র প্রবেশপথে ভারতীয় জাতীয় পতাকা বিছিয়ে রাখা। চেম্বারে বাংলাদেশের রোগী দেখা আপাতত বন্ধ রাখছি। আগে দেশ, পরে রোজগার। আশা রাখব দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হওয়া অবধি অন্যরাও তাই করবেন।’
ঝড়ের বেগে ভাইরাল হয় ইন্দ্রনীলের এই ফেসবুক পোস্ট। বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু চিকিৎসক এই পোস্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করে শেয়ার করেন। শুক্রবার বিকেলে আবার মানিকতলার জেএন রায় হাসপাতাল ফেসবুক পোস্টে লেখে-ভারতবর্ষের প্রত্যেকটা হাসপাতাল থেকে এই আওয়াজটা উঠুক। সেই পোস্টারে লেখা, ‘আপাতত বাংলাদেশি রোগী দেখা বন্ধ। ভারতের চিকিৎসায় সুস্থ থেকে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা! এটা হতে পারে না।’ এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ও। তবে একাংশ আবার ঠিক মেনে নিতে পারছেন না এমন এক সিদ্ধান্ত। এই প্রসঙ্গে পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘আমরা চিকিৎসক হিসেবে তো একথা বলতে পারি না। কারণ, রোগীর প্রথম পরিচয় তিনি অসুস্থ। তবে আগে প্রতিদিন আউটডোরে দেড়শো থেকে দুশো রোগী আসতেন, এখন সেই সংখ্যা কমে ১০-১৫ তে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি কোনও রোগী ভর্তি নেই। শুধু এই হাসপাতাল নয়, সব হাসপাতালের ছবিই এক।’ এদিকে স্বাস্থ্যমহল মনে করছে, কলকাতায় যদি এই প্রবণতা চিকিৎসক ও হাসপাতাল মহলে সংক্রমিত হয়, তা হলে বিপাকে পড়বেন অসংখ্য অসুস্থ বাংলাদেশি। কেননা, অপ্রতুল চিকিৎসা পরিকাঠামো ও বিপুল খরচের কারণে বাংলাদেশের বহু রোগী প্রতি বছর কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসায় ভরসা রেখেই বহু বাংলাদেশি বেঁচে রয়েছেন। ভারত চিকিৎসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে সমস্যায় পড়বেন বহু বাংলাদেশি।
এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করেননি কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। শনিবার পুরসভায় তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে আমাদের প্রবল আপত্তি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনও মানুষ অসুস্থ হলে তাকে সুস্থ করব না? চিকিৎসক বা চিকিৎসা কেন্দ্রের ধর্ম তাকে সুস্থ করা।’ পাশাপাশি এও বলেন, ‘যদি চিকিৎসা না হয়, এটা আমাদের মানবিকতা বিরোধী, এটা ঠিক নয়। কেন্দ্রীয় সরকার যদি ভিসা দেয় তাহলে সে চিকিৎসা করাতে পারবেন। কোনও সমস্যা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কাণ্ডের জেরে পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকলেও মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হচ্ছে।