ভেঙে পড়া আবাসনের বযস মাত্র ৮-১০ বছর। অন্তত এমনটাই জানাচ্ছেন বা তথ্য মিলছে দক্ষিণ কলকাতার বুকে বাঘাযতীনে এই ঝা চকচকে আবাসন সম্পর্কে। মঙ্গলবার দুপুরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে এই আবাসন। আর এমন ঘটনায় সামনে আসছে একাধিক তত্ত্ব। যার মধ্যে জমির চরিত্র বদলই প্রধান।
এত বড় আবাসন ভেঙে পড়ার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার পার্থপ্রতিম বিশ্বাস জানিয়েছেন, যদি এই ধরনের বাড়িতে সাম্প্রতিক অতীতে ক্র্যাক হয়ে থাকে, তাহলে বোঝা যাচ্ছিল বাড়ির একটা দিকে ভারবাহী স্তম্ভ, যেটাকে বলা হয় কলাম, সেগুলো অন্যদিকের তুলনায় বসে যাচ্ছিল। তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় বলা হয়, ডিফেরেন্সিয়াল সেটেলমেন্ট। অর্থাৎ আলাদা আলাদা ভাবে বাড়িটা বসছে। অর্থাৎ একদিকে বেশি বসছে, আরেকদিকে তুলনায় কম বসছে। সাধারণত ক্র্যাক মেঝেতে দেখা যায়, সিলিং কিংবা বিমেও দেখা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে হেলে যাওয়ার পরিমাণটা অত্যন্ত বেশি হয়েছে। তার একটা সম্ভাব্য কারণ, বাড়িটা যে মাটির ওপর তৈরি হয়েছিল, তাহলে সেখানে ফিল্ড আপ সয়েল ছিল কিনা। সেই জমির চরিত্র বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে বাড়ি একদিকে হেলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তাঁর মতে, এর পিছনে আরও একটা সম্ভাবনাও রয়েছে। দুটো পাশাপাশি বাড়ি, তার মাঝখানের ব্যবধান যদি কম থাকে, তাহলে অনেকসময় ফাউন্ডেশন ফেলিওয়রের কারণে কোনও একটা বাড়ি হেলে যেতে পারে। এটা কলকাতার একটা বড় বিপদ। কারণ আগুন লাগলে বেরোতে পারবে কিনা, সেটাও ব্যাপার নয়। ব্যাপার হল, এটা যে বাড়ির স্থায়ীত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। আর মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে তো কথাই নেই। বিপদ ঘাড়ে নিয়ে কলকাতা বেঁচে রয়েছে।
জানা যাচ্ছে, এই বাড়িটির ক্ষেত্রেও ফাটল দেখা দিয়েছিল। আবাসিকরা তাই অন্যত্র সরিয়ে আবাসন লিফটিংয়ের কাজ করছিলেন প্রোমোটার। কিন্তু সেটাই পুরসভার বিনা অনুমতিতেই। ইতিমধ্যেই বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পৌরসভা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে অবশ্য জানিয়েছেন, ‘কলোনি এলাকায় যে যার নিজের বাড়ি করে নিচ্ছে, সেই বাড়িগুলোর স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি রয়েছে কিনা, সেটা দেখা হচ্ছে না। এখানে প্ল্যান নেওয়ার নিয়মই নেই। পুরনো প্ল্যানগুলোর ক্ষেত্রেও খতিয়ে দেখা উচিত। সঙ্গে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা যায় ওই সময় বাড়িতে কেউ না থাকা নিয়েও।’