গণতন্ত্র রক্ষায় ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশের ডাক বামেদের

কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী নীতি, বৃহৎ পুঁজিপতি এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির অশুভ আঁতাত এবং রাজ্য সরকারের জনবিরোধী, স্বৈরতান্ত্রিক নীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র রক্ষা করতে ২০ এপ্রিল ২০২৫ ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিল সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষকসভা, খেতমজুর ইউনিয়ন ও বস্তি উন্নয়ন সমিতি।

শনিবার কলকাতার এই প্রসঙ্গে প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনও করেন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিআইআইটিইউ নেতা অনাদি সাহু এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কৃষক নেতা অমল হালদার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এদিন বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের উদার অর্থনৈতিক নীতি, শ্রমিক কৃষক সহ দেশের সব অংশের মানুষের উপর ভয়ংকর আক্রমণ নামিয়ে আনার অভিযোগ করেন তারা। বিশেষ করে এদিনের বৈঠক থেকে জানানো হয়, গত দশ বছরে দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, শ্রমিক শ্রেণির অর্জিত অধিকার, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, তৈল খনি, কয়লা, ইস্পাত, বিদ্যুৎ, বিমান বন্দর, বন্দরসহ যা কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্ট্র্যাটিজিক ক্ষেত্র সবই আক্রান্ত। দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের হাতে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে না ধরনের রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা। কার্যত দেশে বিজেপি, আরএসএস, এনডিএ জোটের সরকারের মদতে জাতীয় সম্পদের লুট চলছে। আর এই লুটের জেরে আদানি, আম্বানি সহ পুঁজিপতিরা ফুলে ফেঁপে উঠছেন।

এরই পাশাপাশি এনডিএ সরকারের আমলে কিভাবে দেশের সৃষ্ট সম্পদের বৃহৎ অংশ কুক্ষিগত করছে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণি এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে সেই অভিযোগও তোলেন তারা। এরই পাশাপাশি পরিসংখ্যান দিয়ে তুলে ধরা হয়, কিভাবে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ জুড়ে তীব্র বেকারি, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, মজুরি হ্রাস, কৃষকের ফসলের লাভজনক দামের আইন না করা, কৃষি উৎপাদনের ব্যয়-বৃদ্ধি, ঋণের জালে জড়িয়ে কৃষকের আত্মহত্যা, গ্রামে কৃষি শ্রমিক ও ক্ষেত মজুরদের ন্যূনতম মজুরি না পাওয়া, দুর্নীতির কারণে রাজ্যে রেগার কাজ বন্ধ হওয়া, ৬০০ টাকা মজুরি ও ২০০ দিনের কাজের দাবি না মানা, বেকার যুবক-যুবতী, শ্রমিক কৃষক, খেতমজুর সহ জনজীবনে ভয়ংকর সংকট ডেকে এনেছে। কৃষি ক্ষেত্রকে দেশি বিদেশি বহুজাতিকদের কাছে উন্মুক্ত করা, ফরওয়ার্ড ট্রেডিং থেকে অবাধ মজুদ করার অধিকার, উৎপাদন থেকে বিপণন সবই ফড়ে ও বহুজাতিক কৃষি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

পুঁজিপতিদের মুনাফা বৃদ্ধির স্বার্থে পার্লামেন্টে আলোচনা না করে, শ্রমিক সংগঠন গুলির মতামতকে উপেক্ষা করে ২৯ টি শ্রম আইন সংশোধন করে চারটি শ্রম কোড তৈরি করা হয়েছে।, কেন্দ্রের তরফে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম কোড চালু করার চক্রান্তও চলছে। চা, চট সহ রাজ্যের শিল্প কল কারখানায় সংগঠিত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের মালিক তোষণ নীতি ও শ্রমিক বিরোধী ভূমিকা শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ করে তুলেছে কেন্দ্র, এমনও অভিযোগ আনা হয় এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে।

পাশাপাশি গত ১৩ বছর পশ্চিমবঙ্গে যে এক গণতন্ত্রহীন সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে, সেই বিষয়েও উল্লেখ করেন নেতৃত্ব। রাজ্য সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচারে শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা হয় জেলে না হয় বেলে আছেন। রাজ্যের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের জালে রাজ্য। গত ১৩ বছর রাজ্যে কোনো শিল্প বা নতুন বিনিয়োগ নেই। রাজ্যে কাজ নেই, বেকার যুবক যুবতিরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে কাজের সন্ধানে অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা বিপন্ন, আরজিকর কাণ্ডে অভয়ার বিচার প্রহসনে পরিণত হয়েছে। রাজ্যে নারী নির্যাতন, খুন ধর্ষণের ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রাজ্যে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সবই বিপর্যস্ত। রাজ্যের সরকারি জমি বেসরকারি করন করে, পরিবেশ ধ্বংস করে, গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করে কর্পোরেট ও প্রমোটর, অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে বস্তির গরীব মানুষের উচ্ছেদ চলছে।

এদিন এই সামগ্রিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে রাজ্যের সব অংশের শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র শ্রেণি আন্দোলন গড়ে তুলতে সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষকসভা, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন ও পশ্চিম বঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির ডাকে রাজ্যব্যাপী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস জুড়ে পদযাত্রা ও ২০ এপ্রিল ২০২৫ ব্রিগেডে ঐতিহাসিক সমাবেশের আহ্বান জানানো হয় এদিনে বৈঠক থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + 13 =