সৌরভের জন্মদিনে শুভেচ্ছা পাঠালেন না বিরাট, শাস্ত্রী

শনিবার ৮ জুলাই নিজের জন্মদিন পালন করলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। গোটা দেশজুড়ে তাঁর কাছে এসেছে হাজারও শুভেচ্ছা বার্তা। প্রাক্তন থেকে বর্তমান, বহু ক্রিকেটারই তাঁকে এই বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে এই তালিকায় অবশ্য নাম লেখালেন না বিরাট কোহলি। এমনকী, নীরব থাকলেন টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীও।

ভারতীয় ক্রিকেট দলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে স্তম্ভ বললেও বোধহয় কম বলা হবে। ২০০০ সালে টিম ইন্ডিয়া যখন গড়াপেটার কলঙ্কে ক্রমশ ডুবতে বসেছিল, সেইসময় বাংলার এই ক্রিকেটারের কাঁধে ভারতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকে দলের ভাবমূর্তি যেমন একদিকে উজ্জ্বল হয়, তেমনই সাফল্যের দিক থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয় হোক কিংবা ১৯৮৩ সালের পর ভারতীয় ক্রিকেট দলকে আবারও বিশ্বকাপ ফাইনাল তোলা, সৌরভের নেতৃত্ব না থাকলে কখনই সম্ভব হত না। তিনি ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখিয়েছিলেন। আর সেই কারণেই ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তিনি জার্সি ওড়ানোর সাহস দেখাতে পেরেছিলেন। সবথেকে বড় কথা, সৌরভ অধিনায়ক থাকাকালীনই বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, যুবরাজ সিং, জাহির খান এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো তারকা ক্রিকেটাদের ভারতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হয় তাঁরই সময়।

বিরাটের সঙ্গে সৌরভের যে একটা অহি-নকুল সম্পর্ক রয়েছে, সেটা আজ আর কারও অজানা নয়। সৌরভ যখন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই সময়ই বিরাট কোহলিকে সাদা বলের ক্যাপ্টেন্সি থেকে কার্যত সরিয়ে দেওয়া হয়। নিন্দুকেরা বলেন, এই সিদ্ধান্তের পিছনে সৌরভেরই পরোক্ষ মদত ছিল। যদিও সৌরভ জানান যে গোটা সিদ্ধান্তই নির্বাচকদের ছিল। এরপর থেকেই বিরাট এবং সৌরভের মধ্যে নরমে-গরমে এক সম্পর্ক চলতে থাকে। সম্প্রতি আইপিএল টুর্নামেন্টে দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর একে অপরের বিরুদ্ধে প্রথম লিগের ম্য়াচ খেলতে নামার সময়েও দেখা যায় বিরাট ইচ্ছাকৃতভাবে সৌরভের সঙ্গে হাত মেলাতে চাননি। এই ঘটনার জল আরও দুর গড়ায়। বিরাট প্রথমে ইনস্টাগ্রাম থেকে সৌরভকে আনফলো করেন। এরপর সৌরভও একই পন্থা অবলম্বন করেন। যদিও টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় লিগে এই দুই ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

অন্যদিকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীও সৌরভের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেননি। ইতিপূর্বে সৌরভের বিরুদ্ধে পরোক্ষ অভিযোগ এনে রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, ২০১৬ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হওয়ার দৌড়ে তিনিই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু, অনিল কুম্বলে ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির পছন্দের পাত্র হওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত তাঁকেই নির্বাচন করা হয়। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড সিরিজে বিপর্যয়ের পর রবি শাস্ত্রীকে টিম ডিরেক্টরের পদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, কুম্বলে আসার পর তাঁকে বিনা কারণেই ওই পদ ছাড়তে বলা হয়। বিরাট কোহলি ইস্যুতেও সৌরভকে ঠুকে রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, বিরাটের ব্যাপারাটি আরও ভালোভাবে বোর্ড সামলাতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। তৎকালীন বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের দিকেই কার্যত আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘এই বিতর্কের আর কোনও অবশিষ্টাংশ তো বাকি নেই। কোনও ঘটনা ঘটলেই, সেটা নিয়ে মন্তব্য করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই ক্রিকেটার। আমরা দুজনেই খুব ভালো করে খেলাটা বুঝি। তার মানে এটা কখনই নয়, যে কোনও বিষয়ে আমাদের সহমত হতে হবে। সৌরভের সঙ্গে আমাদের বেশ কয়েকবার কথাবার্তা হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের কমিউনিকেশন আরও ভালো হওয়া দরকার ছিল। ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামলানো দরকার ছিল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =