স্যালাইন কাণ্ডের অস্বস্তি যেন কিছুতেই কাটছে না। চাপান-উতোর চলছেই। দুর্বল পরিকাঠামোর ভারে বিপজ্জনক স্যালাইন, ওষুধে নজরদারি চালানোর প্রশ্নে রাজ্যের দুই সরকারি প্রতিষ্ঠান ঠুঁটো জগন্নাথ অত্যুক্তি হবে না। তবে মেদিনীপুর কাণ্ডের জেরে বেআব্রু রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল, ড্রাগ ল্যাবরেটরির পরিকাঠামো। স্যালাইন কাণ্ডের পর সরকারি হাসপাতালে একের পর এক নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ নিয়ে ভাইরাল ভিডিয়ো রাজ্যের অস্বস্তি ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলগুলি এ নিয়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে, খোলা বাজারে ওষুধের উপর নজরদারি চালাতে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে একাধিক নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।
প্রতি মাসে ড্রাগ কন্ট্রোলের ৮০ অফিসারকে মোট চারশো নমুনা সংগ্রহ করতে হবে, বলছে স্বাস্থ্য ভবন। নজরে মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, জেলায় জেলায় স্টোর, ন্যায্য মূল্যের দোকান। প্রতি সপ্তাহে পরিদর্শনের নিরিখে জমা করতে হবে রিপোর্ট। কারণ দর্শানোর নোটিসের সংখ্যাও জানাতে হবে। দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশ। পরিদর্শনে কী মিলল তার আসল তথ্যও থাকতে হবে রিপোর্টে। কোনও রকম সমঝোতা না করার কথা বলা হচ্ছে স্পষ্টভাবে। স্বাস্থ্য ভবনের এই তৎপরতার পরেও থাকছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই বলছেন, নির্দেশিকার এই বয়ানে মনে হতেই পারে স্বাস্থ্য ভবন সিরিয়াস। কিন্তু বাস্তব বলছে, মাসে ৪০০ নমুনা পরীক্ষার পরিকাঠামোই নেই রাজ্য ড্রাগ ল্যাবরেটরির! এক মাসে রাজ্যের ল্যাবরেটরি সর্বোচ্চ পরীক্ষা করতে পারে ৪০টি নমুনা। আর এখানেই প্রশ্ন, প্রতি মাসে বকেয়া ৩৬০টি নমুনার রিপোর্ট মিলবে কবে তা নিয়ে। যার উত্তর এখনও নেই। ড্রাগ কন্ট্রোল, ড্রাগ ল্যাবরেটরির শূন্যপদের ছবিও করুণ। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের পাঁচটি শূন্যপদ, সিনিয়র ইনস্পেক্টরের ৫০টি পদ খালি বলে খবর। পরিদর্শনের জন্য রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের মাত্র একটি গাড়ি। গাড়ির অভাবে শিকেয় আচমকা পরিদর্শনের ভাবনা। কার্যত, ২০২৫ সালেও ২০১৮ সালের ক্যাগ রিপোর্টের পুনরাবৃত্তি। রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল পরিকাঠামো নিয়ে ২০১৮ সালের ক্যাগ রিপোর্টে উঠে আসে ভয়াবহ ছবি। ২০১৮-এর ক্যাগ রিপোর্ট অনুসারে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে রাজ্য ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে ৯৬১৭টি নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৬৯৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করতে পেরেছিল রাজ্য ড্রাগ ল্যাবরেটরি। সময়ে রিপোর্ট না আসায় নিম্নমানের ওষুধই খেয়েছেন সরকারি হাসপাতালের রোগীরা! ২০১৮ সালের ক্যাগ রিপোর্ট বলছে, রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলে কর্মী ঘাটতির সংখ্যা ৭৭ শতাংশ! এখন দেখার অবস্থার বদল শেষ পর্যন্ত কবে হয়।