১০ লাখ টাকা দিলে তৃণমূল জেলা কমিটিতে মিলছে পদঃ মদন মিত্র

বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। অর্থাৎ, নির্বাচন একেবারে শিয়রে না হলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সময় খুব একটা যে রয়েছে তাও নয়। এদিকে তৃণমূল শিবির সূত্রে খবর, এই নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সংগঠন ঢেলে সাজানো হতে পারে। ফলে খুব শীঘ্রই জেলায় জেলায় রাজ্যের শাসকদলের সংগঠনে রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা। তার আগে তৃণমূলে পদ পাওয়া নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা গেল কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে। ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে তৃণমূলের জেলা কমিটিতে পদ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবিও করেন তিনি। পাশাপাশি এই ইস্যুতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন বর্ষীয়ান এই তৃণমূল বিধায়ক।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলেবরে বেড়েছে রাজ্যের শাসকদল। আর তার সঙ্গেই দলে ‘দালাল’-দের আনাগোনা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন কামারহাটির বিধায়ক। সঙ্গে এও বলেন, ‘বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস একসঙ্গে হয়ে গিয়েছে। তারপরও তারা বুঝতে পেরেছে, ছাব্বিশের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। তখন তারা পরিকল্পনা করে তৃণমূলের মধ্যে কিছু দালাল ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা দলের নেতাদের তোষামোদ করছে।’ মদন মিত্রের এই অভিযোগের পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ওই দালালদের কি বুঝতে পারছে না তৃণমূল? এই প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান বিধায়কের স্পষ্ট উক্তি, ‘আসলে ভেকধারী সন্ন্যাসীদের এত সহজে বোঝা যায় না।’

তৃণমূলের পদ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে নিচু স্তরে দুর্নীতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কামারহাটির বিধায়ক। সঙ্গে এও জানান, ‘আমায় যদি কেউ বলেন, টাকাটা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত আসে? কোনও প্রশ্নই আসে না। জেলা নেতৃত্বের একাংশ যুক্ত থাকতে পারে। জেলা কমিটির ছুটকো পদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেন না। জেলা পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে।’

এদিন মদন মিত্র পাশাপাশি এও বলেন, বলেন, ‘সরকারি অফিসারের থেকেও তৃণমূলের পদ পাওয়া এখন মূল্যবান। তৃণমূল কংগ্রেসের পদ পেতে সারা বাংলায় উঠেপড়ে লেগেছেন অনেকে। বিশেষ করে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। তাঁরা বলছেন, যা লাগে লাগুক, একটা পদ চাই। যাঁদের হাতে কাঁচা টাকা আছে, কালো টাকা আছে, যাঁরা খুব তাড়াতাড়ি রাজনৈতিক পরিচয় চাইছেন। তাঁরা বলছেন, জেলা কমিটির সেক্রেটারি করে দে, ১০ লক্ষ টাকা দেব। পঞ্চায়েত, জেলায় পদ পেতে টাকা দিচ্ছেন। অনেকেই আমায় এসে বলেন, আমি এই পদে রয়েছি, আমি ওই পদে রয়েছি। তাঁদের চিনিই না।’

এর পাশাপাশি‘দালাল’দের কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও অবহিত করেন কামারহাটির বিধায়ক। বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো আমায় কোনও পদে বসালেন। দু’দিন বাদে হয়তো ২ জন আমার বাড়িতে এল। বলল, মা মিষ্টি পাঠিয়েছে। তারপর আমার সঙ্গে ছবি তুলল। সেই ছবি দেখিয়ে বাইরে তারা বলল, মদন মিত্রর ভীষণ ঘনিষ্ঠ লোক তারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বললে মদন মিত্র পদ দেবেন। এরকম করেই তাঁরা টাকা তুলছেন।’ সঙ্গে বর্ষীয়ান নেতাদের সতর্ক করেও জানান,‘আমাদের দলের যাঁরা পরিচিত মুখ, তাঁদের ছাব্বিশ পর্যন্ত সাবধান থাকতে হবে। আমার মতো কিছু নেতা আছেন, যাঁরা দালাল দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে যাচ্ছে।’ সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, ‘চোরেদের কোনও ক্যাটেগরি হয় না।’ ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে দলকে সতর্ক হওয়ার বার্তা দিয়ে মদন বলেন, ‘তৃণমূলের নাম করে অনেকে টাকা তুলছেন। সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নিচ্ছেন। দলকে আরও সচেতন হতে হবে। আমার কাছে এরকম অনেক অভিযোগ আসছে। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। দলের নিচুস্তরে দুর্নীতি হচ্ছে। ব্লক কমিটি পর্যন্ত সব দেখে ছাড়া হোক।’ এই দুর্নীতির কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে মদন বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকি, অভিষেক পর্যন্ত এখবর পৌঁছয়নি।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + three =