আসানসোলের ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট মামলায় হরিদেবপুর থেকে গ্রেফতার তরুণী

আসানসোলে একটি ডিজিটাল অ্যারেস্টের মামলায় তদন্তে নেমে কলকাতার হরিদেবপুর থেকে সুকৃতী চৌধুরী নামে এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেন আসানসোল–দুর্গাপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা। বছর ছাব্বিশের ঝকঝকে স্মার্ট তাঁকে জেরা করে পুলিশের দাবি, শুধু আসানসোলের একটি মামলা নয়, কলকাতা–সহ গোটা রাজ্য, এমনকী গোটা পূর্ব ভারতে ডিজিটাল অ্যারেস্ট প্রতারণা গ্যাংয়ের মূল চক্রী এই সুকৃতীই। পুলিশ সূত্রে এও জানানো হয়েছে, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি সমেত সাতটি ভাষায় অনর্গল কথা বলার দক্ষতা রয়েছে তার। শুধু তাই নয়, সফ্‌টওয়্যার বিশেষজ্ঞ সে।

পুলিশ সূত্রের খবর, হরিদেবপুর থানা এলাকার একটি বিলাসবহুল বাড়ি থেকে পাকড়াও করা হয় সুকৃতীকে। প্রতারক চক্রের আর এক চক্রী দিল্লির বাসিন্দা নিখিল রোহতগির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতেন সুকৃতী। এমনকী প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীদের দাবি, নেপাল, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, চিন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশের সাইবার অপরাধীদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল ওই তরুণীর।

সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল অ্যারেস্টের খপ্পরে ফেলে প্রতারণার টাকা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্তত এক কোটিরও বেশি টাকার প্রতারণায় অভিযুক্ত এই তরুণী শহরের একাধিক নামী সংস্থার ব্র্যান্ড প্রোমোশনেও কাজ করেছেন। তাঁর কথার জাদুতে মজে যেতেন তাবড় ব্যবসায়ীরা।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৮ জানুয়ারি। আসানসোল দক্ষিণ থানার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় সাইবার থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি জানান, দেশের একটি নামী ক্যুরিয়ার সংস্থা থেকে ফোন করে জানানো হয়, তাঁর আধার নম্বর ব্যবহার করে গত ৪ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে ড্রাগ পাঠানো হয়েছে। সেই প্যাকেট বাজেয়াপ্ত করেছে কাস্টমস। এর পর দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল এবং সিবিআইয়ের নাম করে হোয়াটসঅ্যাপ কলে চঞ্চলকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক এই অপরাধে জড়িত দাউদ ইব্রাহিমের স্লিপার সেল। তারপরেই চঞ্চলকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট দেখিয়ে এক কোটি তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। আতঙ্কে নিজের ফিক্সড ডিপোজ়িট পর্যন্ত ভাঙিয়ে একাধিক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান চঞ্চল। এক সময়ে বুঝতে পারেন, প্রতারকদের ফাঁদে পড়েছেন তিনি। কিন্তু, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত এক–দেড় বছরে গোটা দেশে তামাম পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সির কাছে ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ডিজিটাল অ্যারেস্ট। শুধুমাত্র গত বছরই গোটা দেশে অন্তত ৯২ হাজার ডিজিটাল অ্যারেস্টের অভিযোগ উঠেছে বলে দাবি সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে। সুকৃতীকে জেরা করে এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি ডিজিটাল অ্যারেস্টের মামলার কিনারা করা সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 1 =