ট্রেড লাইসেন্স বাতিল দুই সংস্থার থেকে সরঞ্জাম কেনা হয় আরজি করে, দাবি সিবিআইয়ের

কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভে ২০২১ সাল‍ের এপ্রিল থেকে জুন এই সময়কালে রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য এবং হাসপাতালের অন্যদের সুরক্ষা দিতে জরুরি ভিত্তিতে এন–৯৫ মাস্ক, ভেন্টিলেশন সার্কিট–সহ ব্রিদিং ফিল্টার, গলার রোগ নির্ণায়ক যন্ত্রের মতো ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এদিকে চার্জশিটের ১৬ নম্বর পয়েন্টে সিবিআই দাবি করেছে, কোনও নিয়ম–নীতির তোয়াক্কা না–করে হাসপাতালের চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল এমএস হাজরা মেডিক্যাল এবং এমএস হাজরা মেডিক্যাল এজেন্সির মাধ্যমে। এদিকে এই দু’টি সংস্থার ট্রেড লাইসেন্স  বাতিল করা হয়েছিল। যে দু’টি সংস্থা থেকে সে সব কেনা হয়, সেই দু’টি সংস্থার ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হয়ে গিয়েছিল তার আগেই। এ নিয়ে লিখিত ভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন হাসপাতালের পারচেজ কমিটির সদস্যেরা, তৎকালীন ডিন, এমএসভিপি এবং ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু সে সব কথার তোয়াক্কা না করে আর্থিক ফায়দার কথা মাথায় রেখে ওই দু’টি সংস্থার কাছ থেকেই সেই সময়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ জরুরি প্রয়োজনের সামগ্রী কিনেছিলেন বলে আরজি কর–দুর্নীতির মামলার চার্জশিটে দাবি করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এতে শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, রোগীদের জীবনও ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়েছিল।

আর এখানেই প্রশ্ন, তা হলে তাদের মাধ্যমে কেন ওই ১৫টি সরঞ্জাম কেনা হবে তা নিয়ে। আর এই প্রশ্ন তোলেন হাসপাতালের তৎকালীন অ্যাকাউন্টস অফিসার সমীর দত্ত। লিখিত ভাবে তিনি নিজের আপত্তির কথা জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। তার পর এই বিষয়ে আপত্তি জানান তৎকালীন এমএসভিপি মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিন প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায় এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ সোমনাথ দাস। কিন্তু সিবিআই তাদের চার্জশিটে জানাচ্ছে, এত জন পদাধিকারীর আপত্তি সত্ত্বেও তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সরঞ্জাম কিনতে ছাড়পত্র দেন ওই দু’টি সংস্থাকেই। ই–টেন্ডারে যাতে বিষয়টি আটকে না–যায়, সে জন্য প্রতিটি ইউনিট কেনা হয়েছিল ১ লক্ষ টাকার কম বাজেটে। সিবিআইয়ের দাবি, এন–৯৫ মাস্ক কেনা হয় ৯৯ হাজার ২২৫ টাকার মধ্যে। আবার সংক্রমণ আটকানোর মিশ্রণ কেনা হয়েছিল ৯৮ হাজার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। সার্জিকাল মাস্ক কেনা হয়েছিল ৯৬ হাজার ৪৮৮ টাকা ৭৫ পয়সায়।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, আরজি কর–দুর্নীতি মামলায় সন্দীপের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা, আফসার আলি খান ও আশিসকুমার পান্ডেকে। গত বছর নভেম্বরের শেষেই ওই মামলার চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। কিন্তু ওই চার্জশিট সংক্রান্ত সম্পূর্ণ নথিপত্র আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে জমা না পড়ায় মামলার চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছিল না। আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত চার্জ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সব নথি চেয়ে উষ্মা প্রকাশ করতেই ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার ১০০ শতাংশ নথিপত্র সিবিআই আদালতে জমা করা হয় বলে সূত্রের খবর। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, এই সপ্তাহেই মামলার চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + 16 =