গত আড়াই বছর চন্দননগরের গঙ্গাবক্ষে চালু হয়েছে ভাসমান রেস্তোরাঁ ‘জলশ্রী’। বাংলার প্রথম ভাসমান রেস্তোরাঁ এটিই। কিন্তু আমার মতো যারা ততটা খাদ্যরসিক নয়, যতটা ভ্রমণরসিক তাদের জন্য ভারী খাওয়া শরীরকে খানিক ব্যতিব্যস্ত করে তোলা ছাড়া আর কিছুই নয়।। যদিও ফরাসডাঙার মনোরম আবহাওয়ায় মিশে গিয়ে অত্যাচারিত হলাম না, বরং খাতির-যত্নের অভাব হল না মোটেই।
তবে এখানেই আমাদের টেবিল ভরে উঠল একের পর এক সুস্বাদু খাবারে। একেবারে গঙ্গাবক্ষে ভাসতে ভাসতে মিলল আন্তর্জাতিকতার স্বাদ।
চন্দননগর স্টেশন থেকে টোটো করে মাত্র দশ মিনিটের রাস্তা স্ট্র্যান্ড। নামলেই আপনার চোখের সামনে পড়বে ঐতিহাসিক রানিঘাট। দুই মাস আগে ওই রানিঘাটেই সংসার পেতেছিল জলশ্রী। তবে মাস দুয়েক হল সামান্য একটু সরে এসেছে। দু-পা হাঁটলেই আপনার বাঁ পাশে পড়বে ভাসমান এই রেস্তোরাঁ। ৫০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করতে হবে প্রথমে। তবে পরে এই টিকিটের দাম খাবারের সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হয়।
জলশ্রীতে প্রায় ৫০ জন ব্যক্তির বসবার জায়গা রয়েছে। ভিতরে খাবার টেবিল থেকে উপভোগ করা যায় বাইরের অপরূপ গঙ্গার সৌন্দর্য আর ওপারের উত্তর চব্বিশ পরগনার জগদ্দল সংলগ্ন বন-জঙ্গল-ঘাট।
এখানে যাঁরা এই জলশ্রীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে জানা গেল, শনিবার অথবা রোববার বাদে সপ্তাহের যে কোনও দিন পারিবারিক অনুষ্ঠান পালন করার জন্য এই রেস্তোরাঁটি বুক করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যা ৩০ জনের মতো হতে হবে এবং প্রত্যেক সদস্যের জন্য খরচ হবে মাথাপিছু ১৫০০ টাকা। যার মধ্যে থাকবে কিছু মুখরোচক খাবার এবং থাকবে মধ্যাহ্নভোজের বাহারি আয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের অধীনে থাকা ‘জলশ্রী’ রেস্তোঁরা বোটটি ৩৩ মিটার লম্বা, ৪.৮৭ মিটার চওড়া এবং ১.৪০ মিটার গভীর। ১৬০ পিসি-র ইঞ্জিনে গতিবেগ ৬ নট। কমবেশি ৫০ জন লোক অনায়াসে একসঙ্গে বসে খেতে পারেন রেস্তোরাঁয়। ছোটোখাটো অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিচের ডেকে সাউন্ড সিস্টেমের বন্দোবস্ত আছে। মৃদু লয়ে চলে রবীন্দ্র সংগীত। এছাড়াও বিনামূল্যে ওয়াইফাই তো রয়েছেই। গঙ্গার ওপর ছোটো অফিস মিটিংয়ের জন্য আদর্শ এই জায়গা।
এবার আসা যাক এখানকার খাবারের কথায়। জলশ্রীতে গিয়ে দেখলাম ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, ইতালিয়ান সবরকমের খাবারই পাওয়া যায়। জলশ্রীর সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি পদ ভিন্ন স্বাদের মকটেল। রয়েছে আমপোড়া শরবৎ। এরপর একে একে এল শেজওয়ান চিকেন, গন্ধরাজ ভেটকি কাটলেট, মাহি হরিয়ালি টিক্কা, বাসন্তি পোলাও-এর সঙ্গে গন্ধরাজ মটন কষা, বেইজিং ফ্রায়েড রাইস, শেষ পাতে গাজরের হালুয়া।
গন্ধরাজ ভেটকি কাটলেটের মূল উপাদান ভেটকি মাছ, এবং তা টাটকা না হলে খেতে ভালো লাগবে না। এক্ষেত্রে দেখা গেল একেবারে টাটকা ভেটকি আমাদের পাতে দেওয়া হল। মুখে কামড় দিতেই বোঝা গেল ভিতর থেকে যতটা তুলতুলে, বাইরে থেকে ততটাই মুচমুচে। এই পদে উপরি পাওনা গন্ধরাজ লেবুর সুঘ্রাণ। মিলবে মাহি হরিয়ালি টিক্কা। এটিও তৈরি ভেটকি মাছ দিয়ে। এই পদে কোনো কোটিং নেই, পুরোটাই চৌকো মাপের একটি মাছের টুকরো। দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে এক ইঞ্চি। চামচে করে ভাঙলেই বোঝা যায় কতখানি নরম এ পদ। সঙ্গে বিভিন্ন ভারতীয় মশলার অপূর্ব স্বাদ। সাথে ছিল পুদিনার বিশেষ চাটনি।
ছিল বেইজিং ফ্রায়েড রাইস। যা চিনের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। নুডলস ও রাইসের মিশ্রণ। বেসিল পাতার সুগন্ধে ম-ম করছিল পুরো পদ। উপরে সাজানো ছিল টুকরো করা ডিম সেদ্ধ, গাজর আর বেসিল পাতা। এই পদে মেশানো ছিল ডিম, চিকেন, চিংড়ি ও মাশরুম। ঝাল-ঝাল মশলাদার এ খাবারের স্বাদ অভূতপর্ব।
প্রবেশের সময়
প্রতিদিন সকাল ১১:৩০টা থেকে থেকে রাত্রি ১০টা অবধি এই রেস্তোরাঁটি খোলা থাকে।