লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে কন্যাশ্রী, বিগত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে একাধিক আর্থিক প্রকল্পের ঘোষণা করেছে সরকার। এই সমস্ত সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা যাতে সমস্ত মানুষ পায় তার জন্য চালু হয়েছে দুয়ারে সরকার। এদিকে কয়েকদিন আগেই গোটা রাজ্যে ফের বসেছিল দুয়ারে সরকার। ক্যাম্পে ক্যাম্পে ছিল বিস্তর ভিড়। এদিকে ভুরি ভুরি নয়া প্রকল্পে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে গরিবদের আর্থিক সুবিধা প্রকল্প। আর তা নিয়েই তৃণমূল বোর্ডের বিরুদ্ধে সরব খোদ তৃণমূল কাউন্সিলররাই। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। অনেকেই বলছেন, অন্যান্য প্রকল্পগুলিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সুকৌশলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শহরের দরিদ্রদের আর্থিক সাহায্য প্রকল্প। এদিকে এই টাকা বন্ধ করে রাখা এবং কেন চালু করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে খোদ তৃণমূল কাউন্সিলররাই সরব হলেন। এই ঘটনায় বাস্তবিক-ই বিড়ম্বনায় নিজেদের বোর্ডকে।
শোনা যাচ্ছে, গত ২০২২ সাল থেকে ধীরে ধীরে বন্ধ করা হচ্ছিল দরিদ্রদের জন্য আর্থিক প্রকল্প। ২০২৫ সালের শুরুতে জানিয়ে দেওয়া হয় যেহেতু লক্ষীর ভাণ্ডার দেওয়া হচ্ছে, তাই গরিবদের জন্য আর কোনও প্রকল্প নয়। কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই আর্থিক সুবিধাকে বলা হতো, ‘জি আর’। শহরে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে যাঁরা অত্যন্ত দরিদ্র, তাঁদের হাতে বার্ষিক ১৪৪০ টাকা তুলে দেওয়া হতো পুরসভার তরফে। রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের একটি তহবিল থেকে কলকাতা পুরসভার জন্য এই অর্থ অনুমোদিত হতো।
প্রশাসনিক মহলের দাবি, বার্ষিক প্রায় ১০ হাজারের বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষজন এই টাকা হাতে পেতেন। যা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন প্রাপকরা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রাপকরা সরাসরি নিজেদের জনপ্রতিনিধির কাছে বিষয়টি তুলেছেন। মানুষের ক্ষোভ সামলাতে গিয়ে তিতিবিরক্ত তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। তাঁদের অবশ্য দাবি, পুরসভা যেভাবে আর্থিক কষ্টে ভুগছে, তাতে এই প্রকল্প বন্ধ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। কিন্তু, কোনওরকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কেন বিপাকে ফেলা হল দুঃস্থ মানুষগুলিকে? প্রশ্ন ঘুরছে প্রশাসনের অন্দরেই।
কলকাতা পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলোরা সাহা বলেন, ‘উত্তর পেতেই প্রশ্ন তুলছিলাম। কিন্তু পুরসভার তরফ থেকে সঠিক উত্তর পাইনি।’ এই প্রসঙ্গে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ওই টাকা দিয়ে আমাদের খুবই সুবিধা হতো। চার বছর হয়ে গেল টাকাটা পাচ্ছি না।’ ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ যদিও বলছেন, ‘২ বছর ধরে জি আরটা বন্ধ আছে। তবে যা শুনেছি খুব শীঘ্রই এটা চালু করা হবে।’ খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ কটাক্ষের সুরে জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রীর একদিনের সভা বাতিল হলেই এই মানুষগুলো টাকা পেতেন।’ যদিও মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘জিআর টাকা এলেই তো আমরা সবাইকে দিয়ে দিই। কিন্তু এখন মানুষের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না কারণ সব মহিলাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন।’