নন্দীগ্রাম আন্দোলনে ৭০ জন অভিযুক্তের মামলা প্রত্যাহার করতে চায় রাজ্য, ‘না’ আদালতের

নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় খুন ও অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে চায় রাজ্য। আর তাতে রাজ্যের যুক্তি খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত সূত্রে খবর, এই তালিকায় রয়েছে শেখ সুফিয়ান, আবু তাহের-সহ প্রায় ৭০ অভিযুক্তের নাম।  রাজ্যের এই আর্জি জনসাধারণের কাছে ভুল বার্তা যাবে, এমনটাই স্পষ্ট জানায় বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।

নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনা ২০০৭ সালে। পুলিশ গুলি চালানোর পর সিপিএম নেতা কর্মীদের উপর পালটা আক্রমণ, খুন এমনকি অপহরণের অভিযোগে ৩০৭,৩০২,৩৬৪ ধারায় প্রায় সত্তর জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলা দশটি মামলা তুলতে চেয়ে নিম্ন আদালতে আবেদন করে রাজ্য। নিম্ন আদালত রাজ্যের আবেদনে সিলমোহর দেয়। নিম্ন আদালতের সেই রায়কে খারিজ করেছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি দেবাংশু বসাকের পর্যবেক্ষণ, ‘ভোটে হিংসা হোক বা ভোট পরবর্তী হিংসা, গণতন্ত্রের জন্য হিংসা ত্যাগ করা উচিত। সমাজকে হিংসামুক্ত করা উচিত রাজ্যের।’ তাঁর আরও পর্যবেক্ষণ, যেকোনও ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে রাজ্যকে। খুনের মতো অপরাধে মামলা প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছে, তাতে ভুল বার্তা যাবে। অভিযুক্তদের বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে। মামলা প্রত্যাহার কখনই জনস্বার্থে হতে পারে না। এর ফলে জনগণ ক্ষতির মুখে পড়বে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চাইলেও এটা প্রত্যাহার করতে পারে না।

মামলাকারী দীপক মিশ্র ও নীলাঞ্জন অধিকারী দুটি জনস্বার্থ মামলা করেন। মামলা যায় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই বেঞ্চ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর রায় দিয়ে রাজ্যকে তিরস্কার করেছে।

মামলাকারীর আবেদন ছিল, ২০২০ সালের ১০ ফ্রেবরুয়ারি তাঁরা জানতে পারেন, মামলা তুলে নিতে চায় রাজ্য। চার্জশিট দেওয়ার পর কীভাবে মামলা তুলে নিতে চায় রাজ্য? এমনকি ওই চার্জশিটে উল্লেখ ছিল, ঘৃণ্যতম অপরাধ করেছে অভিযুক্তরা।

২০০৭ ও ২০০৯ সালে নন্দীগ্রাম, খেজুরি থানায় মামলাগুলি দায়ের হয়েছিল। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর রাজ্য এই মামলাগুলি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের ৪৪ পাতার রায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অভিযুক্তদের বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে। রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত এই মামলায় রাজ্যনৈতিক প্রতিহিংসা ও আত্মরক্ষার যুক্তি দেন। যা ধোপে টেকেনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − 3 =