বাংলাদেশ জুড়ে যাবে পাকিস্তানের সঙ্গে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেল বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। রবিবার ভারতীয় জাদুঘরে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আগামী ৬ মাসে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে গেলে অবাক হব না।’ বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার চলছে, তাদের কষ্ট বোঝেন বলেই জানান। এরই রেশ ধরে নিজের মায়ের প্রসঙ্গ টেনে দেশভাগের ক্ষতের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। মহম্মদ ইউনুসকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি শুভেন্দু।
রবিবার ভারতীয় জাদুঘরে এবিসি অডিটোরিয়ামে ‘খোলা হাওয়া’ নামক সংগঠনের আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন ক্রাইসিস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তা কোনও গণতান্ত্রিক দেশে হয় না। আমি নিজে ভিকটিম। আমার মা শ্রীমতী গায়েত্রী ভট্টাচার্য, তাঁর বাবা বরিশালের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৫৯ সালে এক কাপড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন অনেক হিন্দু আছেন, যাদের শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক, ভারতীয় নাগরিক হিসাবে আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, আওয়ামি লীগ করার অপরাধে বা হিন্দু হওয়ার অপরাধে যারা বাংলাদেশ থেকে এখানে পালিয়ে এসেছেন, তাদের দয়া করে জেলে পুরবেন না। আগেও হাসিনা, বঙ্গবন্ধু মুজিবরের পরিবারকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। আমি অনুরোধ করব, জাত-ধর্ম কিছু দেখতে হবে না, যারা প্রাণ বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে এসেছেন, তাদের তাড়াবেন না। তারা শরণার্থী। আওয়ামি লীগের শীর্ষ নেতারা, যাদের পাসপোর্টও কেড়ে নিয়েছে, তাদের জেলে ভরবেন না। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করুন। মহারাষ্ট্র সহ কয়েকটি রাজ্যে ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করছে।’
এরই রেশ ধরে শুভেন্দু এও জানান, আগামী ৬ মাসের মধ্য়ে বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে যায়, তাতে অবাক হবেন না। এই দাবি যে তাঁর অমূলক নয় তা বোঝাতে এর কারণ ব্যাখ্যাও করেন তিনি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘যার সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মিক কোনও যোগ নেই, মিস্টার ইউনূস কার্যত এনজয় করছেন, নিজের গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে রক্ষা করছেন। সম্প্রতি যে কর বসিয়েছেন, তাতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত করছাড় পেয়েছে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। অপারেশন ডেভিল হান্ট-এই সব কিছুই ওনার হাতে নেই। হিন্দু সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে শেষ করছে। যদি তারা কিছু বলতে না পারেন, তবে কোনও একদিন সকালে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ জুড়ে যায়, আমি তো অবাক হব না।’ এখানেই শেষ নয়, এরপর তিনি আরও বলেন, ‘কার্যত পাকিস্তানই বাংলাদেশ চালাচ্ছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত কোনওদিন নিজের অফিসে থাকছেন না, তিনি গোটা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওখানে যে মৌলবাদী সরকার দেশ চলছে, এখানে বিএনপির কোনও ভূমিকা নেই, আওয়ামি লীগ তো ছেড়েই দিন। জাতীয় পার্টিরও ভূমিকা নেই। কার্যত সকলকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। জামাতের লোকরা চালাচ্ছে, যারা ১৯৭১-এ পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। জামাতের অফিসে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসছে, সব কাজে নাক গলাচ্ছে।’
এরপরই বাংলাদেশের নাগরিকদের সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ওরা সনাতনী হিন্দুদের শূন্য করতে চাইছে আর মুক্তিযুদ্ধের যারা ধারকবাহক, সমর্থক, তাদের বর্ডার গার্ড, শিক্ষা কমিটি, সরকারি দফতর থেকে বাদ দিচ্ছে। এমনকী ভাস্কর্যও মুছে ফেলছে। শুধু বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান নয়, রবীন্দ্রনাথের একটা ভাস্কর্যও বাংলাদেশে নেই। চট্টগ্রামে গান্ধীজির স্মারক ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধির নামে যে লাইব্রেরি ছিল, তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ৭১-র মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা অস্বীকার করার জন্য। এই ধ্বংস যদি বন্ধ না হয়, তবে ওয়ার থেকে সংসদ পর্যন্ত পাকিস্তানের হাতে চলে যাবে। ওয়ান ফাইন মর্নিং বাংলাদেশের পার্লামেন্ট ঘোষণা করবে বিভাজনটা ভুল ছিল, আমরা সংযুক্তিকরণ চাইছি।’