ফুটপাথবাসিনী মা-বাবার পাশ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ। সাত মাসের শিশু কন্যার সঙ্গে নারকীয় এই অত্যাচারের ঘটনায় সোমবারই রাজীব ঘোষ নামে এক যুবককে দোষী সাব্যস্ত করে নগর দায়রা আদলত। এরপর মঙ্গলবার দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনায় আদালত।
সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘পকসো আইনে দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছে। রাজ্যের তরফে আমি ছিলাম। বিপক্ষ উকিল আদালতে যুক্তি দিয়েছেন, ছেলেটির বয়স কম। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছে। সেই যুক্তিকে খণ্ডন করতে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের কথা আমরা উল্লেখ করেছি। আমরা মনে হয়েছে, কলকাতা পুলিশ ইতিহাস গড়ল। এদিনের এই রায় বিচার ব্যবস্থা ইতিহাসের অংশ হল। কারণ, এই ধরনের মামলায় আমরা এখনও পর্যন্ত ফাঁসির সাজা দিতে দেখিনি। এখানে মেয়েটি বেঁচে গিয়েছে। আর বিপক্ষের আইনজীবী বারবার আইনজীবী আর্জি জানান, এখানে মেয়েটি বেঁচে আছেন, সেখানে আমরা ফাঁসি চাইতে পারি কি না তা নিয়ে। তবে এটাও ঠিক, আদালতের আইনে কোথাও বলা নেই ফাঁসির সাজা পেতে শোনাতে গেলে নির্যাতিতার মৃত্যু হতে হবে। আমি বারবার আদালতে বলেছি, মেয়েটি যদি সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরে, ওকে সারাজীবন এই ঘটনা মানসিক যন্ত্রণা দেবে। আদালত এটাকে বিরল থেকে বিরলতম কেস বলেছে।’
সূত্রে খবর, এদিনের শুনানিতে আদালত জানায়, ‘এই ধরনের মানুষের সমাজে বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। মেয়েটির দেহ নিয়ে খেলা করা হয়েছে। তাই মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনও শাস্তি দেওয়ার নেই। এর পাশাপাশি দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিনের এই মামলায় ডিসি নর্থ দীপক সরকার জানান, ‘সাত মাস বয়সের ফুটপাথবাসী বাচ্চা কিছুই বোঝে না। তার সঙ্গে এই ধর্ষণের ঘটনা। বিষয়টি নজরে আসার পরই আমরা কলকাতা পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে তদন্ত শুরু করি। সমস্ত প্রচুর সিসিটিভি ফুটেজ দুদিন ধরে খতিয়ে দেখি। দোষীর হাঁটাচলা ম্যাচ করাতে পেরেছি। দোষীর ডিএনএ পরীক্ষা হয়। বাচ্চাটির ডিএনএ প্রোফাইল দোষী যুবকের জামায় যে রক্ত লেগেছিল তার সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছে। আদলতকে বোঝাতে পেরেছি এটা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা।’ উল্লেখ্য়, গত ৩০ নভেম্বর বড়তলা থানায় এক শিশুকন্যা নিখোঁজ হয়ে যায়। বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, রাতে রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে তাঁরা ঘুমোচ্ছিলেন। ঘুমন্ত শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই ফুটপাত থেকেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এরপর বড়তলা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। গত ৪ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম থেকে অভিযুক্ত রাজীব ঘোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৬ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যুবককে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৩৭(২), ৬৫(২) এবং শিশু সুরক্ষা আইনের (পকসো) ৬ নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে।