ছেলের বিয়ের জন্য রাখা সোনা সরিয়ে নিজেই লুঠের গল্প ফেঁদে পুলিশের জালে গৃহকত্রী

ছেলের বিয়ের জন্য রাখা সোনা সরিয়ে নিজেই লুঠের গল্প ফেঁদেছিলেন। শেষমেশ রিজেন্ট পার্কে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনায় অভিযোগকারী গৃহকত্রীকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মহিলার এক আত্মীয়কেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে রিজেন্ট পার্ক পুলিশ সূত্রে খবর, স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ছেলের বিয়ের গয়না চুরি করে ডাকাতির গল্প ফেঁদেছিলেন সোনালি বিশ্বাস নামে ওই মহিলা। এই ঘটনায় মদত দেন ওই মহিলারই এক আত্মীয়া। অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ঘটনার কিনারা করে পুলিশ।

রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বাসিন্দা পেশায় রেল কর্মী পিকলু বিশ্বাস। তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ক্যান্সারে মৃত্যু হয়। এরপর সোনালি বিশ্বাসকে বিয়ে করেন তিনি। পিকলুর প্রথম পক্ষের ছেলে দেবজ্যোতি বিশ্বাস। সামনেই দেবজ্যোতির বিয়ে ছিল। তার জন্য বাড়িতে সোনার গয়না কিনে রাখা ছিল। এরপর সোমবার সন্ধেয় রিজেন্ট পার্ক থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে টালিগঞ্জের ম্যুর অ্যাভিনিউর এই আবাসনে ডাকাতি হয়েছে বলে দাবি করেন গৃহকর্ত্রী সোনালি বিশ্বাস। সঙ্গে এও জানান, তাঁর ছেলের বিয়ে এপ্রিল মাসে। সেজন্য বাড়িতে ছিল বেশ কিছু গয়না। সোমবার সন্ধ্যায় ২ দুষ্কৃতী তাঁর ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁকে ধাক্কা দেয়। এরপর তিনি পড়ে গেলে তাঁর হাত বেঁধে ফেলে।  তারপরই ছুরি দেখিয়ে বাড়িতে থাকা ১৬০ গ্রাম সোনার গয়না লুঠ করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

তবে ঘটনার তদন্তে নেমে কিনারা করতেই বেগ পেতে হয় তদন্তকারীদের। যে আবাসনে ঘটনাটি ঘটে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতেই সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। পুলিশ সূত্রে খবর, সেখানে বাইরে থেকে কোনও অপরিচিত লোককে আসতে দেখা যায়নি। কিন্তু ঘটনার যে বিবরণ গৃহকত্রী দিয়েছিলেন তাতে একাধিক অসঙ্গতি মেলে। এরপরই লাগাতার জেরার মুখে পুরো বিষয়টি তিনি স্বীকার করে নেন বলে খবর।

রপরই সোনালিকে টানা জেরা করতে থাকে পুলিশ। বেরিয়ে আসে আসল সত্য। পুলিশের দাবি, জেরায় সোনালি স্বীকার করেন, তাঁর বাপের বাড়িতে আর্থিক সমস্যা রয়েছে। কিছুদিন আগে বাপের বাড়ির তরফ থেকে তাঁর কাছে ৬ লক্ষ টাকা চাওয়াও হয়। এরপরই সোনালি তাঁর জামাইবাবু রাজা নাগের সঙ্গে ডাকাতির গল্প ফাঁদেন।

পুলিশ তদন্তে নেমে এও জানতে পেরেছে, সোনালি ধৃত আত্মীয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁর স্বামীর প্রথম পক্ষের ছেলের বিয়ের গয়না সরিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর ডাকাতির গল্প সাজিয়ে তিনি চুরির দায় থেকে বাঁচার চেষ্টায় ছিলেন। সেজন্য নিজেই সাজান গোটা ঘটনা। এরপর চুরি ও পুলিশকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে সোনালি বিশ্বাস ও তাঁর আত্মীয় রাজা নাগকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অভিযোগ অনুযায়ী, সোনালি বিশ্বাস দরজা খুলতে গেলে, দুই মুখোশধারী দুষ্কৃতী জোর করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারপর তাকে মুখে কাপড় গুঁজে, গলায় ছুরি ঠেকিয়ে আলমারি খুলতে বাধ্য করে এবং সোনার গয়না লুটে পালিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =