ট্যাংরায় দুই বধূ-মেয়েকে খুন যে করা হয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। অন্যদিকে, খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়ে প্রাণ নেওয়া হয়েছে দে পরিবারের নাবালিকার। তবে সেদিন রাতে গাড়ি নিয়ে কোথায়ই বা যাচ্ছিলেন দে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।
তাই এবার গোটা ঘটনার রহস্য ছেদ করতে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে পুলিশ-প্রশাসন। দুই বউকে কি একজন খুন করেছে নাকি দুই ভাই আলাদাভাবে নিজেদের স্ত্রীকে খুন করেছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে শুধু বয়ান নয়, সায়েন্টিফিক এভিডেন্স সংগ্রহে জোর দিচ্ছে পুলিশ।
আর এই সায়েন্টিফিক এভিডেন্স নেওয়ার জন্য বাড়ির তিনতলার বিছানা থেকে যে রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার হয় তা দিয়েই এবার রহস্যভেদ করতে চায় পুলিশও। সেটিতে কোনও আঙুলের ছাপ আছে কিনা আর তা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি থাকা দুই ভাইয়ের আঙুলের ছাপের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখতে চায় পুলিশ। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, হাসপাতালে ডাক্তারদের থেকে সবুজ সংকেত পেলেই শুরু হবে সেই আঙুলের ছাপ মেলানোর কাজ।
এদিকে গোটা ঘটনার নেপথ্যে ঋণ বলেই প্রাথমিকভাবে অনুমান তদন্তকারীদের। কিন্তু এত বড় ব্যবসার মালিক কীভাবে দেনায় জর্জরিত হলেন তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তবে তদন্তে যা জানা যাচ্ছে তাতে ব্যবসায় লোকসান বাড়তে থাকলেও সর্তক হননি দে পরিবারের দুই ছেলে। বরং দুহাতে খরচ করেছেন। গতবছর দুটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন স্ত্রীদের। ঘুরে দাঁড়ানোর পরিস্থিতি নেই বুঝেও বারবার বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন ঋণের টাকায়।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, ট্যাংরা কাণ্ডের শুরুতেই জানা গিয়েছিল, দে পরিবার অত্যন্ত ধনী ছিলেন। একাধিক ব্য়বসা, প্রাসাদোপম বাড়ি, কী ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর নেপথ্যে কারণ হিসেবে ঋণের বোঝা উঠে আসতেই একাধিক প্রশ্ন দানা বাঁধে তদন্তকারীদের মনে। তাতেই জানা গিয়েছে, প্রসূন ও প্রণয়ের বাবার আমলে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল চামড়ার ব্যবসা। পরবর্তীতে তা দুইভাইয়ের হাতে আসে। তারপর থেকেই দেখা দেয় মন্দা। ব্যবসায় লাভ কমতে থাকে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে লোকসানের পরিমাণ। তা সত্ত্বেও জীবনযাত্রায় কোনও পরিবর্তন করেননি প্রসূন ও প্রণয়। একটা সময়ের পর ঋণের টাকায় শখ পূরণ করেছেন। গতবছর দুইভাই স্ত্রীদের জন্য দুটি ফরচুনার গাড়ি কিনেছেন। বহুবার বিদেশেও গেছেন। তার জেরেই একটা সময়ে দেনায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েন দুইভাই।
এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পাওনাদারের চাপ। সামনেই মার্চ মাস ফলে ব্যাঙ্কের চাপও ছিল। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। যার পরিণতি হয় ভয়ংকর। উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোরে ট্যাংরা শীল লেনে দে বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় পরিবারের তিন মহিলা সদস্যের দেহ। এরপরই জানা যায় পরিবারের ৬ জনই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এরপর একে একে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।