একই পরিবারের তিনজনের দেহ উদ্ধার হালতুতে। ঘরের মধ্যে থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল সোমনাথ রায়(৪০), তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা রায়(৩৫) এবং তাঁদের বছর আড়াইয়ের সন্তান রুদ্রনীল রায়ের। মঙ্গলবার সকালে হালতুর অ্যাসবেস্টাসের চালের এক কামরার ঘর থেকে তিন জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিন যে পরিবারের তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেই পরিবারের কর্তা সোমনাথ রায় পেশায় অটোচালক ছিলেন। জানা গিয়েছে, তাঁরও অনেক ধারদেনা ছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পাওনাদার বাড়িতে এসে টাকা চেয়েছিলেন। হুমকিও দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন সকালে প্রতিবেশীরা ওই পরিবারের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। এরপর পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরর ঢুকতেই নজরে আসে তিন বছরের ছেলেকে কোলে জড়িয়ে রেখেছে বাবা! বাবার গলায় ফাঁস, ছেলের ঘাড় পিছনের দিকে ঝুঁকে। আর ঠিক উল্টোদিকেই ঝুলছে স্ত্রী। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সোমনাথ আগে তাঁর সন্তানকে খুন করেছেন, তারপর ছেলের মৃতদেহ বুকে ভালো করে কাপড় দিয়ে বেঁধে নেন। তারপর গলায় ফাঁস লাগান। শিশুটিকে মেরে দম্পতি আত্মহত্যা করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘সোমনাথের নিজের অটো ছিল। ছেলেটি অসুস্থ ছিল। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। তার জন্য কিছু ধারদেনা হয়েছিল। হয়তো কিছুটা মানসিক চাপে ছিল। কিন্তু, কাউকে কিছু বলত না।’ এই ঘটনায় সুমিত্রার বাবা জানান, ‘আমার মেয়ে-জামাই খুব ভাল ছিল। জামাই অটো চালাতেন। জায়গা নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সমস্যা ছিল। গণ্ডগোলও হত।’
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানাচ্ছে, ঘরের ভিতর থেকে মিলেছে একটা সুইসাইড নোট। দেওয়ালেও লেখা এক বার্তা। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, সুইসাইড নোট আর্থিক দেনার কথাই উল্লেখ রয়েছে। দেওয়ালে লেখা বার্তাও খানিকটা সেরকমই। জানা যাচ্ছে, সোমনাথের তিন বছরের ছেলের জটিল শারীরিক রোগ ছিল। দু’বার অস্ত্রোপচারও হয়েছে তার। আর ছেলের চিকিৎসার কারণেই বাজারে ধারবাকি হয়ে গিয়েছিল সোমনাথের।
এর পাশাপাশি সোমনাথের মামা-মামির সঙ্গেও পারিবারিক একটি বিবাদের ঘটনাও সামনে এসেছে। কারণ,যে ঘরে থাকতেন সোমনাথ, সেটি তাঁর নামে ছিল না। তাই নিয়েও একটা পারিবারিক সমস্যা ছিল। সে কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমনাথের মামা-মামিকেও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে আর্থিক অনটনের বিষয়টিই জোরাল হয়ে উঠেছে। বাকিটা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।