বিধানসভায় বিল পাশ হলেও রাজ্যপাল সই করেন না। মাসের পর মাস ফেলে রাখেন। এই অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিন ধরেই সরব তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সেই রাজ্যের সরকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর খুশি বাংলার শাসকদল। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, অপরাজিত বিল-সহ ২৩টি বিল রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পড়ে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর বাংলার রাজ্যপাল সেই বিলগুলি অনুমোদনে তৎপর হবেন বলে আশাবাদী বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
একইসঙ্গে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, রাজভবনে বিল অনুমোদনের জন্য পড়ে থাকা নিয়ে বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও তার আগে জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বারবার সংঘাত বেধেছে রাজ্য সরকারের। আর এই ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে এই সমস্যা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়। তামিলনাড়ুর প্রসঙ্গ টেনে এদিন তিনি বলেন, ‘শুধু আমরা নয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই ঘটনা ঘটছে।’ এবার বিল পাশ হবে বলে তিনি আশাবাদী। বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের মাননীয় রাজ্যপাল সেটা নজর করে, যে বিলগুলো পেন্ডিং রয়েছে, সেগুলো পাঠিয়ে দেবেন।’
প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের কাছে ১০টি বিল অনুমোদনের জন্য পড়ে আছে জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল সেই রাজ্যের সরকার। সেই মামলায় এদিন সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, বিল ঝুলিয়ে রাখা বৈধ কাজ নয়। বিল নিয়ে তিমনাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এদিকে বিলে সাংবাদিক বিচ্যুতি ঘটেছে মনে করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন রাজ্যপাল। সেক্ষেত্রেও মন্ত্রিসভার পরামর্শ মেনে রাজ্যপালকে চলতে হবে বলে স্মরণ করিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা বারবার আমাদের রাজ্যপালকে বলেছি। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে বিধানসভায় পাশ হওয়া ২৩টি বিল রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিল রয়েছে। যেমন অপরাজিতা বিল, গণপিটুনি বিল। কেন এগুলোকে অনুমোদন দিচ্ছেন না, বুঝতে পারছি না। সংবিধানের কোনও অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করে এমন কোনও বিল নেই, যেটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো যেতে পারে। বিলে অনুমতি না দিলে কোনও সুপারিশ থাকলে সেটা জানিয়ে রাজ্যপাল আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা সংশোধন করে বিলটি পাশ করিয়ে পাঠালে তা অনুমোদন করা ছাড়া কোনও বিকল্প থাকে না। তারপরও আমরা দেখেছি, আমাদের বিলগুলো যাচ্ছে, তার মধ্যে কিছু কিছু বিল উনি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেই বিলগুলি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই।’
তামিলনাড়ুর সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই নিয়ম মেনে সব রাজ্যের রাজ্যপাল কাজ করলে খুব ভাল হবে। আমার মনে হয়, আমাদের রাজ্যের সুবিধা হবে। জনগণের স্বার্থের জন্য অনেক বিল রাজ্য সরকার আনে। এই বিল যদি সেইসময় পাশ করানো না হয়, তাহলে তার যৌক্তিকতা নষ্ট হয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সর্বভারতীয় স্পিকারদের সম্মেলনেও এই নিয়ে আমি বলেছি। প্রস্তাব দিয়েছিলাম, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্যপাল বিলে সই না করলে সেটিকে অনুমোদন করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হোক।’