কসবার ডিআই অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে আসা চাকরিহারা শিক্ষকের পেটে লাথি মারার ঘটনায় পুলিশ আধিকারিক রিটন দাসকে মামলার তদন্তভার থেকে সরিয়ে দিল কলকাতা পুলিশ। প্রসঙ্গত, গত বুধবার কসবার ডিআই অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলে চাকরিহারা শিক্ষকরা৷ পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে অফিসের ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা৷ তখনই পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের উপরে বেদম লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে৷ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় এক চাকরিহারা শিক্ষকের পেটে লাথি মারার অভিযোগ ওঠে কসবা থানার এসআই রিটন দাসের বিরুদ্ধে৷
এই ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর সব মহল থেকেই কলকাতা পুলিশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ এই ঘটনাকে অবাঞ্ছিত বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং কলকাতা পুলিশের নগরপালও। একইসঙ্গে এই ঘটনা খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দিয়েছিলেন তাঁরা৷
এদিকে কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, যেহেতু ঘটনার সময় কসবায় থানায় ডিউটি অফিসার হিসেবে রিটন দাস নামে ওই এসআই কর্তব্যরত ছিলেন,তাই প্রাথমিক ভাবে মামলার নথিতে তদন্তকারী অফিসার হিসেবে তাঁর নামই ছিল৷ কিন্তু যে অফিসারের বিরুদ্ধে চাকরিহারা শিক্ষকদের নির্মম মারের অভিযোগ উঠেছে, তিনিই কেন তদন্তের দায়িত্বে থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল৷
এই প্রসঙ্গে সিপি-র বক্তব্য,’কলকাতা পুলিশে একটা ফাইল মেনটেইন করতে হয়। যিনি ডিউটি অফিসার থাকেন, তিনিই এই ফাইলটা মেনটেইন করেন। তাই তাঁর দ্বারাই সমস্ত ঘটনা সেই ফাইলে নথিভুক্ত হয়। আর সাধারণত যখন কোনও এফআইআর হয়, তিনিই হন আইও- অর্থাৎ তদন্তকারী অফিসার। কলকাতা পুলিশে এই প্র্যাকটিস অনেক দিন ধরেই রয়েছে। সেই সূত্রেই রিটন দাস এই এফআইআর-এর আইও।’
কিন্তু পরবর্তীকালে এই মামলায় তদন্তকারী অফিসার বদলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সিপি। কিন্তু আদালেত রিপোর্ট পেশের পর কেন বদল? তার উত্তরে সিপি বলেন,’আইও পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও একাধিক কেসে দেখা গিয়েছে, যে আইও-কে নিয়ে চাপ রয়েছে, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, হয় সেদিনই, নয়তো পরের দিন। কিন্তু আমরা এফআইআর প্রথম যেটা রেকর্ড করি, সেটাই আদালতে পেশ করা হয়। তারপর পর আইও-কে পরিবর্তন করা হয়।’
পুলিশের লাথি মারার তীব্র চর্চা হচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশেষণ যোগ্য করে বিঁধা হচ্ছে, কিন্তু সে সবের উর্ধ্বে পুলিশের সঙ্গে কী হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে শোনা যায় সিপিকে। পুলিশ কর্তার বক্তব্য, যে পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে লাথি মারার অভিযোগ রয়েছে, ওর আঘাত বুকে, কানে চড় মারা হয়েছে। আর এখানেই সিপির প্রশ্ন, ইয়ার ড্রাম যদি ইনজুরি হত, তাহলে কে দায়ী থাকত তা নিয়েও। সঙ্গে এও জানান, ওই পুলিশ আধিকারিকের চশমা ভেঙে গিয়েছে। এখানেও প্রশ্ন যদি কাচ চোখে ঢুকে যেত, তাহলে দায় কে নিত। কিন্তু লাথি মারার বিষয়টি কখনই কাম্য নয় বলেও জানান সিপি। কিন্তু পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও তাঁর গ্রহণযোগ্য নয় বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত কসবায় ডিআই অফিসে চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভের ঘটনার তদন্তভার সঞ্জয় সিং নামে এক সাব ইন্সপেক্টরকে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের অভিযোগ ছিল, গত বুধবার কসবার ডিআই অফিসে জোর করে ঢুকে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা৷ পুলিশকর্মীদেরও আক্রমণ করা হয়৷ এর পরেই আত্মরক্ষায় এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে ‘হাল্কা বলপ্রয়োগ’ করা হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে তদন্তকারী অফিসার পরিবর্তন নিয়ে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।