মুর্শিদাবাদের নিহতদের দুই পরিবারের পাশে দাঁড়াবে সিপিআইএমঃ সেলিম

আর্থিক সহায়তা নিয়ে নিহতদের দু’টি পরিবারেরই পাশে দাঁড়াবে সিপিআইএম। মুর্শিদাবাদে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করবে সাধ্যমতো। তার জন্য গণসংগ্রহও করা হবে, মঙ্গলবার  কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবন থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই বার্তা দিলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এরই পাশাপাশি  রাজ্য সরকারের কাছেও এই পরিবারগুলিকে সহায়তা দেওয়ার দাবিও তোলেন তিনি।
সোমবার মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিলেন সেলিম। ছিলেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ ভট্টাচার্য সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ। সেলিম বলেন,‘আক্রান্ত বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রদায় নির্বিশেষে অভিন্ন অভিযোগ হলো পুলিশ সময়মতো আসেনি। পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি। থানা থেকে গাড়িতে পাঁচ মিনিট দূরত্বে হিংসা হয়েছে। পুলিশ পৌঁছেছে সাড়ে ৩ ঘন্টা বাদে।’ একইসঙ্গে সেলিম এও জানান,‘পুলিশ সংখ্যাগুরুবাদী রাজনৈতিক লাইন নিয়ে চলছে। যাঁরা সংখ্যালঘু, যে যেখানেই হোক, তাঁর কোনও অধিকার থাকবে না। এমনকি শান্তিতে থাকার অধিকার পর্যন্ত থাকবে না।’
কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে এদিন সেলিম মুর্শিদাবাদের হিংসায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও তোলেন। সঙ্গে এও বলেন, ‘বসিরহাট, আসানসোল, ধুলাগড়ের মতো বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হিংসায় কোনও তদন্ত করেনি রাজ্য। কারা দাঙ্গা করল, কেন করল সামনে আসেনি। এই তথ্য জানা দরকার ভবিষ্যতে এমন সম্ভাবনা এড়ানোর জন্যই।’
একইসঙ্গে সেলিম এদিন এও জানান,‘২০ এপ্রিল ব্রিগেডের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিক, বস্তিবাসী আন্দোলন প্রচার চালাচ্ছে শ্রমজীবী সব অংশের মধ্যে। প্রচারের অন্যতম বিষয় হয়েছে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা। কারণ এই আইন কোনও একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিষয় নয়। সাংবিধানিক অধিকারের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। সব অংশই এই আক্রমণের শিকার।’ এরই রেশ টেনে সেলিম এও জানান,এদিনই সুপ্রিম কোর্টে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দায়ের করেছে সিপিআইএম। পলিট ব্যুরো সদস্য হিসেবে সিপিআইএমের পক্ষে মামলা দায়ের করেছেন তিনিই।
সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রসঙ্গে সেলিম ফের বলেন,‘আমরা গোড়া থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই প্রয়াসের বিরোধী। বিভাজন তৈরির জন্য আরেকটি পদক্ষেপ। অথচ এরাজ্যে তৃণমূলের দখলদারিতে থাকা ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টা নেই। সংবিধানে ধর্মীয় অধিকার পালনের অধিকার স্বীকৃত। এই আইন অসাংবিধানিক। তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কিন্তু তা করতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।’
এখানেই শেষ নয়, এদিন সেলিম এও বলেন,‘একদিকে রামনবমীকে সামনে রেখে তার আড়ালে উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে। আরেকদিকে ওয়াকফ আন্দোলনকে সামনে রেখে তার আড়ালে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে।’ এর পাশপাশি মুর্শিদাবাদের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল তোলেন রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগের দিকেও। বলেন গোয়েন্দা বিভাগ ব্যর্থ। সঙ্গে এও বলেন, এই ঘটনায় ‘ডিপ স্টেট’ জড়িত কিনা খুঁজে দেখা দরকার। উল্লেখ্য, ক্ষমতার স্তর থেকে অঘোষিত কোনও লক্ষ্য নিয়ে গোপন কার্যক্রমকে পরিভাষায় ‘ডিপ স্টেট’ বলা হয়।
মুর্শিদাবাদের ঘটনা সম্পর্কে সেলিমের বক্তব্য,‘ ওখানে যে যে এলাকায় হিংসা ছড়িয়েছে তা প্রতিহত করতে সক্রিয় থেকেছেন সিপিআইএমের কর্মীরা। এক মিষ্টির দোকানে গিয়েছি। আমাদের কর্মীকে দেখিয়ে দোকানমালিক বলেছেন যে তিনি না থাকলে দোকান পুড়ে যেত।’
পাশাপাশি সেলিম এদিন এও জানান, নিহত বাবা-ছেলে হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসের বাড়ি গিয়েছিলেন সেলিম। তাঁরা উত্তেজনা থামাতে চাইছিলেন। হরগোবিন্দ দাস আগের নির্বাচনেও বুথে এজেন্ট ছিলেন সিপিআই(এম)’র। বয়সের কারণে পার্টি সদস্যপদ নবীকরণ করেননি। তাঁদের তাড়া করে ঘরে ঢোকানো হয়। দরজা ভেঙে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই প্রসঙ্গে সেলিম আশ্বাস দেন, নিহতচন্দন দাসের দুই সন্তানের শিক্ষার দায়িত্ব নেবে সিপিআইএম। নিহত ইজাজ আহমেদের স্ত্রীকেও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। সঙ্গে উল্লেখ করেন গুজরাট গণহত্যা বা দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিল সিপিআইএম। এটা একটা নয়, এমন উদাহরণ আরও রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এর পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রস্ন তুলে দেন সেলিম। বলেন,‘ইজাজকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নেওয়ার পর রক্তের দরকার ছিল। হয়ত বেঁচে যেত। পুলিশের আসল লক্ষ্য ছিল দেহ থেকে গুলি বের করে নেওয়া। জঙ্গীপুর থেকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলা হয়। ইজাজের মা তিন হাজার টাকায় কোনোমতে গাড়ি ভাড়া করে বহরমপুরে পৌঁছান। সেখানে ভর্তির জন্য তিন ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। পুলিশ পাশে ছিল না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + thirteen =