আবেগের জোরে ভরল ব্রিগেড

একের পর এক নির্বাচনে রক্তক্ষরণ দেখা গেছে বামেদের। সত্য বলতে ফলাফলের নিরিখে এঁরা চলে গেছে আইসিইউতে। কারণ, ২০২১-এর লোকসভায় শূন্য। এরপর ২০২৪-এর  বিধানসভাতেও একটাও আসন পায়নি তাঁরা। বামেরা এখন খাতায় কলমে সত্যিই সর্বহারার দল। ফলে এই ব্রিগেড ঘিরে সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ আর কৌতুকের বন্যা। তবে তাতে কী! কৌতুকের মধ্যেও ‘কমরেড’দের আবেগে একটুও ভাটা নেই। শুধু ই নয়, কয়েকটি বাজারি মিডিয়া আগেই প্রশ্ন তুলেছে ব্রিগেড ভরবে কি না। তবে এদের কোনও কথার উত্তর দিতকে চান না এই লাল শিবিরের সমর্থকেরা। আবেগটাই বড় কথা। কে কী বলল তাতে কীই বা আসে যায়।
এদিকে আবার হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস ছিল, বৈশাখের শুরুতে কালবৈশাখীর দাপট দেখলেও দক্ষিণবঙ্গে আর বৃষ্টির কোনও ব্যাপার নেই। এবার গরম তার দাপট দেখাবে। কলকাতা-সহ দক্ষিণের জেলাগুলিতে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে তাপামাত্রা। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে কলকাতাবাসী যখন চরম অস্বস্তিতে ঠিক তখনই বামপন্থী শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর ও বস্তি সংগঠন ডাক দিয়েছে ‘বিগেড চলো’।
মাঠ ভরানোর ডাক দিতেই সংগঠনের অন্দরে আশঙ্কার কথা চালাচালি চলছিল, এই গরমে? ভরবে তো? কাঠফাটা রোদে ব্রিগেডের সিদ্ধান্ত কি যথোপযুক্ত? এমন সংখ্যালঘু প্রশ্নে একমাত্র ভরসা  দলের প্রতি তাঁদের আবেগ। দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে ব্রিগেডে আসা এক সমর্থকের কথায়, তিনি আজ অবধি কোনও দিন বামেদের ব্রিগেড আসেননি, এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘গরম? বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের রক্ত কি কম গরম নাকি? লাল পতাকায় আমাদের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। আসব না?’
বর্ধমান থেকে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছেছেন সন্দীপ মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে একরত্তি মেয়েকে নিয়ে ঘুরে দেখাচ্ছেন গোটা মাঠ। পরনে লাল পাঞ্জাবি। কাস্তে-হাতুড়ি আঁকা একটাই টুপি তাঁর মেয়ের মাথায় পরিয়ে রেখেছেন। এই রোদে মেয়ের কষ্ট নেই? উত্তরে সন্দীপবাবু বলেন,’এর আগে ইনসাফ ব্রিগেডে মেয়ে বলেছিল ওর মীনাক্ষীদিদিকে সামনে থেকে দেখতে চায়। তখন অবশ্য গরম ছিল না। কিন্তু সেইবার ওর মধ্যে যে উত্তেজনা দেখেছিলাম, সেটা এবারও রয়েছে। গরম তো কী? ওকে বোঝাতে হবে তো লালঝান্ডা কী! ওরা কী বলতে চায়, কেন চায়!’
শনিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববারও পারদ খানিক বাড়বে বই কমবে না বলেই জানানো হয়েছে আলিপুরের তরফে। এমনটা যে হবে, তা আগে থেকেই আন্দাজ করে ৫০ হাজার লাল টুপির ব্যবস্থা করেছে বামেরা। একেই ভাঁড়ার প্রায় শূন্য, তাতেই যতটুকু পারা যায় কর্মী-সমর্থকদের কথা মাথায় রেখে পানীয় জল ও মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ব্রিগেডে। গরমের জন্য ছাতা, গামছা সঙ্গে আনতেও বলা হয়েছে। তবে এটুকু বিলক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে, আবেগের কাছে তপ্ত রোববার কমরেডদের কাছে থোড়াই কেয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + 2 =