ইনস্টিটিউট সেরাম ডি ইন্ডিয়া (এসআইআই)-এর নেতৃত্বে জনস্বাস্থ্যের জাতীয় উদ্যোগের অংশ হিসাবে কলকাতায় “কনক্লেভ কনকুইস্টার এল ভিপিএইচ ওয়াই এল ক্যান্সার ২০২৫”-এর সূচনা করা হল। প্রচারাভিযানটি প্রাথমিক হস্তক্ষেপ এবং প্রতিরোধের উপর জোর দিয়ে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) এবং সার্ভিকাল ক্যান্সার এবং অন্যান্য ধরনের ক্যান্সারে এর ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর বিশেষ নজর দিচ্ছে।
শহরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা সভায় এই প্রসঙ্গে বক্তব্য় রাখতে গিয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বাসব মুখোপাধ্যায় জানান, এইচপিভি কেবল জরায়ুর ক্যান্সারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভালভা, যোনি, মলদ্বার, লিঙ্গ এবং ওরোফ্যারিঙ্কসের ক্যান্সারের সাথেও যুক্ত, যা পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই আক্রান্ত হতে পারেন। একইসঙ্গে এও জানান, এই মুহূর্তে প্রতি তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত। যা থেকে পরবর্তীতে হতে পারে পুরুষের যৌনাঙ্গে ক্যানসার, মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যানসার (সার্ভিকাল ক্যানসার। এই প্রসঙ্গে বক্তব্য় রাখতে গিয়ে তিনি জানান, এই ভাইরাসের ১০০টি টাইপ রয়েছে। তার মধ্যে ‘টাইপ ৬’, ‘টাইপ ১১’ কম ঝুঁকিপূর্ণ। যা থেকে পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে নিম্নাঙ্গে আঁচিল কিংবা গুটি দেখা যায়। আর এই ঘটনা রয়েছে আমাদের মধ্যে অনেকেরই। তাঁরা জানেনই না শরীরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ঢুকেছিল। তবে টাইপ ১৬ অথবা টাইপ ১৮ শরীরে প্রবেশ করলেই বিপদ। যা থেকে পরবর্তীতে হতে পারে পুরুষের যৌনাঙ্গে ক্যানসার, মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যানসার (সার্ভিকাল ক্যানসার)। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে মৃত্যুর হার কম। তা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মহিলাদের মধ্যে সার্ভিকাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখ ক্যানসার ক্রমশ বাড়ছে। চিত্তরঞ্জনে ক্যানসার আক্রান্ত যত মহিলা আসছেন তার মধ্যে সত্তর শতাংশ এই সার্ভিকাল ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রত্যেকেই আসছেন স্টেজ থ্রি অবস্থায়।শরীরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রবেশ করলে পঁচানব্বই শতাংশ ক্ষেত্রেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে বের করে দেয়। কিন্তু কোন পাঁচজনের ললাটে ক্যানসার লেখা কেউ তা জানে না। চিকিৎসকরা বলছেন, বাঁচার উপায় একটাই। সময় থাকতে এইচপিভি ভ্যাকসিন নিতে হবে। ইতিমধ্যেই বিহারে সরকারি স্তরে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। যার জন্য সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে ৯৪ লক্ষ ভ্যাকসিনের অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
কলকাতার সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে এইচপিভি ভ্যাকসিন। এদিনের এই অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা জানান, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের দেওয়া যায় এই ভ্যাকসিন। প্রথমবার নেওয়ার ছ’মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। যদি কেউ ১৪ বছরের মধ্যে না নেয় সেক্ষেত্রে নিতে হবে তিনটি ডোজ। ১৪ থেকে ২৬ বছর বয়সিদের জন্য প্রথম ডোজ নেওয়ার দু’মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ, প্রথম ডোজ নেওয়ার ছ’মাসের ব্যবধানে তৃতীয় ডোজ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন একটি ভ্যাকসিন আনার চিন্তা করছে। যা ৪৫ বছর পর্যন্ত নেওয়া যাবে। এটি এক ডোজের ভ্যাকসিন। এদিন সার্ভিকাল ক্যানসার সচেতনতা অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধ্যাপক ডা. জয়দীপ চৌধুরী, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পল্লব চট্টোপাধ্যায়, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।