অপারেশন ‘সিঁদুর’এর পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমস্যায় পুণের আইন পড়ুয়া শর্মিষ্ঠা পানোলি। কারণ, এই মন্তব্যকে ‘সাম্প্রদায়িক মন্তব্য’ বলে তকমা দিয়ে জন্য তাঁকে গ্রেফতারও করেছে কলকাতা পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতারির ঘটনায় আদালত চত্বরে সরবও হতে দেখা গিয়েছিল তাঁক। তবে এবার এই ঘটনায় তারই পাশে পেলেন বিজেপি সাংসদ তথা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকে। এই গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারের প্রতি কটাক্ষ ছুড়ে কঙ্গনা বলেন,’পশ্চিমবঙ্গকে উত্তর কোরিয়া বানানোর চেষ্টা করবেন না।’ প্রসঙ্গত, শনিবারে শর্মিষ্ঠাকে গ্রেপ্তারের পর রবিবার-ই সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে সোচ্চার হতে দেখা যায় কঙ্গনাকে। এরই পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অনুরোধ জানান, ২২ বছর বয়সি আইন পড়ুয়া শর্মিষ্ঠা পানোলিকে মুক্তি দেওয়া হোক। এরপর আরও এক ধাপ পা বাড়িয়ে কঙ্গনা এও বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার নাম করে কাউকে হয়রানি করা কখনওই উচিত নয়। কেউ যদি ইতিমধ্যে ক্ষমা চেয়ে এবং পোস্ট ডিলিট করে থাকেন, তাহলে তাঁকে জেলে পোরা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, তাঁর কেরিয়ার শেষ করে দেওয়া এবং চরিত্রহননের চেষ্টা- এসব অত্যন্ত অন্যায়। দেশের কোনও মেয়ের সঙ্গেই এমন ব্যবহার করা উচিত নয়।’ পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে অনুরোধের সুরে বলেন,’আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, রাজ্যটিকে যেন উত্তর কোরিয়ার মতো করে না তোলা হয়। প্রত্যেকেরই গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। শর্মিষ্ঠা যা বলেছেন, তা সাধারণভাবে বলেছেন। আজকের প্রজন্ম ইংরেজি ও হিন্দি দুই ভাষাতেই এই ধরনের শব্দ প্রায়ই ব্যবহার করে থাকে। তিনি একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী তরুণী, তাঁর ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাই তাঁকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া উচিত।’
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়ে দেশের পক্ষে মন্তব্য করেছিলেন শর্মিষ্ঠা। সে সময়ে বলিউডের একাধিক অভিনেতার নীরবতা নিয়ে তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ‘সাম্প্রদায়িক মন্তব্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর গুরগাঁও থেকে কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং আদালতের নির্দেশে তাঁকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। তবে পাশাপাশি এও জানা যাচ্ছে, ওই মন্তব্যের জন্য গত ১৫ মে তারিখের ভিডিওটি মুছে ফেলেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমাও চান শর্মিষ্ঠা। এদিকে কলকাতা পুলিশ এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছে, কোথায় কোন অভিযোগের ভিত্তিতে কেন শর্মিষ্ঠাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। এই নিয়ে ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তি না ছড়ানোর অভিযোগও করা হয়েছে পুলিশের তরফে।
শুধু কঙ্গনা রানাউত নন, বিজেপির একাধিক নেতা শর্মিষ্ঠার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এক্স-এ পোস্ট করে লেখেন, ‘একটি ভিডিও করে তিনি মুছেও ফেলেছেন এবং প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন। তার পরেও ২২ বছরের একটি মেয়েকে গ্রেফতার করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁর কথায় কোথাও কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ায়নি। এরপর পুলিশের এই তৎপরতা বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করছে। এটা আর আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, এটি নির্বাচনমুখী বাংলায় হিংস্র রাজনীতির চেহারা নিচ্ছে।’ এখানে না থেমে এরই পাশাপাশি বিজেপির তরফ থেকে এ প্রশ্নও তোলা হয়েছে যে, ‘শুধু বিজেপি সমর্থকদেরই কি এইভাবে দ্রুত আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে? রাজ্যের তৃণমূল নেতারা যদি হিন্দু ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন, তখন কি পুলিশ এত দ্রুত পদক্ষেপ করে?’ প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ অলআইজঅনশর্মিষ্ঠা-য় প্রচার চলছে। বহু সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতা শর্মিষ্ঠার মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন।