ফের অশান্তির আশঙ্কায় ডায়মন্ড সিটি সাউথের আবাসনের আবাসিকরা

দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত আবাসন ডায়মন্ড সিটি সাউথ। অভিজাত হলেও সেখানে বেশ কিছুকাল ধরে দেখা দিয়েছে অশান্তির ছায়া। পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না যায়, সেই আশঙ্কা থেকে আবাসিকদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে হরিদেবপুর থানায় একটি আগাম এফআইআর-ও দায়ের করা হয়েছে বলে সূত্রে খবর। আবাসিকদের তরফ থেকে অভিযোগে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক কিছু উদ্বেগজনক ঘটনা, পুরনো ঝামেলার ইতিহাস এবং তার জেরে নিরাপত্তা সংস্থা বদলে তৈরি হয়েছে সমস্যা।
হরিদেবপুর থানা সূত্রে খবর, ডায়মন্ড সিটি সাউথ রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনেরপক্ষ থেকে অভিযোগ পত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমান নিরাপত্তা ও হাউসকিপিং পরিষেবা সংস্থা এসঅ্যান্ড আইবি সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড  ১০ জুন ২০২৫ থেকে তাঁদের চুক্তি বাতিল করছে।  যদিও চুক্তিভঙ্গের জন্য সংস্থাটিই দায়ী এবং সেটা তারা নিজেরাই মেনে নিয়েছে আগেই। এরপর সংস্থা পরিবর্তন করা জরুরি আবাসনের তরফ থেকে। তবে তা করার ক্ষেত্রে আগের মত ধর্মঘট, গোলমাল ও হুমকির আশঙ্কা করছে বাসিন্দারা।
একইসঙ্গে এফআইআরে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সংস্থা বা তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে এর আগেও দু’বার বড় ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে কর্তব্যরত অবস্থায় মদ্যপান করার অভিযোগে কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তারা। পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ২০২১ সালেও অন্য একটি পরিষেবা সংস্থাকে নিয়োগের সময় আবারও সংঘর্ষ, গেট অবরোধ এবং প্রবেশ আটকে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, আদালতের নির্দেশে পুলিশি নজরদারি বসাতে হয়। এরপর এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তখন কলকাতা হাইকোর্ট একটি রুলিং দেয়, যেখানে বলা হয়, বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও চলাফেরার অধিকার রক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব। সেই মামলার রেফারেন্সও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এবারের এফআইআরে।
তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যে আরও জটিল হয়ে উঠেছে তারই উল্লেখ রয়েছে এই চিঠিতে। সেখানে জানানো হয়েছে, এসঅ্যান্ড আইবি-র কয়েকজন কর্মীর অবসর নেন কিন্তু সংস্থার তরফে তাঁদের পরিবর্তে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। এর ফলে কিছুদিন তো এমনও হয়েছে, আবাসনের নিরাপত্তা সামাল দিতে  বাসিন্দারাই গেটের দায়িত্বে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। এমনী বন্ধ ছিল হাউসকিপিং পরিষেবাও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর ছিল যে, আবাসনের পক্ষ থেকে ৪ মে একটি পৃথক অভিযোগও থানায় জমা দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ডিসিএসআরএ ইতিমধ্যে এনআইএস ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি নামী সংস্থাকে নতুন নিরাপত্তা ও হাউসকিপিং দায়িত্বে নিযুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর এখানেই লুকিয়ে রয়েছে সেই আতঙ্ক। আবার যেন ২০২০ বা ২০২১ সালের মত পরিস্থিতি না হয়। তাই আপাতদৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনের কাছে একাধিক আর্জি জানানো হয়েছে এই আবাসনের তরফ থেকে। এর মধ্যে রয়েছে, বাড়তি পুলিশ মোতায়েন,গেট দিয়ে ঢোকা-বেরোনো যেন ব্যাহত না হয়, জল, বর্জ্য অপসারণ, ইলেকট্রিক ও প্লাম্বিং পরিষেবা যেন বন্ধ না হয়, কোনও ধর্মঘট বা কর্মবিরতি যেন না ঘটে।
এদিকে এই সমস্যার পিছনে ইউনিয়নের চাপ এবং শাসকদলের এক প্রাক্তন সাংসদের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রাক্তন সাংসদ, শুভাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, মেসেজেরও উত্তর দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =