রাজ্যের প্রশাসনে শীর্ষপদে প্রবেশিকার ফলপ্রকাশে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হল স্বচ্ছতাকেই। বৃহস্পতিবারই প্রকাশিত হয়েছে ডব্লুবিসিএস, ২০২২ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল। আর তাতে এই প্রথম সফল পরীক্ষার্থীদের নামের পাশেই কমন র্যাঙ্কও উল্লেখ করা হয়েছে। কে কোন ক্যাডারে যাচ্ছেন সেটা যেমন রয়েছে পাশাপাশি ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিসে যোগ্যতা নির্ণায়ক নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে। এক্সিকিউটিভ হোক বা রেভেনিউ কিংবা পুলিশ, যে ক্যাডারেই সফল প্রার্থীরা যোগ দিন না কেন, সমস্ত সফলদের মধ্যে তাঁদের র্যাঙ্ক কত, ২০২২-এর বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে তাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। যা কার্যত ‘মেধাতালিকা’র কাজ করছে।
তবে এবার পুলিশ সার্ভিসে আটটির সব শূন্যপদ পূরণ হল না। কমিশন সূত্রে খবর, যোগ্যতার যে নম্বর সামগ্রিকভাবে রাখা হয়েছিল সেই নম্বর পেরতে পেরেছেন মাত্র পাঁচজন। একটি অসংরক্ষিত-সহ সবমিলিয়ে পুলিশে খালি তিনটি পদ। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী যোগ দিচ্ছেন পুলিশেই। তৃতীয় স্থানাধিকারীও যোগ দেবেন পুলিশে, তিনি আবার মহিলা। স্বচ্ছতায় প্রতি ক্ষেত্রে যে প্রাপ্ত নম্বরে বাছাই করা হয়েছে সেই নম্বরও দেওয়া হয়েছে। অসংরক্ষিত ক্ষেত্রে তা ১০৮৭.২৫ ও তফসিলি উপজাতিতে ৯৬১.৭৫। পুলিশে যাঁরা গেলেন তাঁদের কমন ব়্যাঙ্ক যথাক্রমে ১, ৩, ১৭, ১৯ ও ২১। শীর্ষ স্থানাধিকারীদের পুলিশে যোগদান তাৎপর্যেরও বটে। এই প্রসঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত আইএএস মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই আরও স্বচ্ছতায় জোর দেন। কারণ তিনি চান না কোনও অস্বচ্ছতার অভিযোগ এক্ষেত্রে উঠুক।
কমিশন সূত্রে খবর, বিভিন্ন দপ্তর দ্রুত নিয়োগ করতে চাইছে, সেই মতো কমিশন তালিকাও পাঠিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন-সহ কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। প্রথম যিনি তিনি প্রীতম মিশ্র ও কমন র্যাঙ্কের তৃতীয় ঋতিকা ঘোষ দুজনেই পুলিশে যোগদান করতে চেয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী প্রিয়তোষ পিপলাই ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) হতে চেয়েছেন। কমন ব়্য়াঙ্কে চতুর্থ অন্তর্জিতা দেবও এক্সিকিউটিভ হতে চান। দেখা গিয়েছে যে, বেশিরভাগ সফল ব্যক্তিদের অপশনাল অর্থাৎ ঐচ্ছিক বিষয় ছিল নৃতত্ত্ব বা অ্যানথ্রোপলজি। অনেকেই ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, পালি নিয়ে এই পরীক্ষায় সফল হয়েছেন।
আগে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময় কমন মেরিট লিস্ট থাকত না। এবার সেটা থাকায় দপ্তরে প্রোমোশনের সময়ও উপরের দিকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা সুবিধা পেতে পারবেন। পাশাপাশি এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের অফিসার বা এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের মতো ক্যাডারের ক্ষেত্রে যে ভুল ধারণা থাকে, সেটাও বদলে যাবে। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই ডব্লুবিসিএস ক্যাডারদের গুরুত্ব দিয়েছেন প্রশাসনে।
এবার ডব্লুবিসিএস পরীক্ষা, ২০২২-এর ক্ষেত্রে মোট ১৫৩টি শূন্যপদের স্থানাধিকারীদের মধ্যে অসংরক্ষিত পদ ৮৪। ওবিসি (এ)-এর জন্য ১৩টি, ওবিসি (বি)-এর ১০, তফসিলি পদ ৩৩ ও তফসিলি উপজাতি ৮টি পদ। এই ক্ষেত্রে মোট ৩০ জনের নাম রয়েছে। রেভিনিউ সার্ভিসে রয়েছেন ৬০ জন। এটি অর্থ (রাজস্ব) দপ্তরের অধীন। ওয়েস্ট বেঙ্গল কোঅপারেটিভ সার্ভিসে যোগ দেবেন চারজন। এর মধ্যে কমন র্যাঙ্কে ৬৩ স্থানাধিকারীও যেমন রয়েছেন তেমনই অসংরক্ষিতরই ৭৫তম স্থানাধিকারী ও তফসিলি জাতির একজন যিনি কমন র্যাঙ্ক ১৭৬তম। ওয়েস্ট বেঙ্গল লেবার সার্ভিসে যে ১৪ জন গেছেন তাঁদের প্রথম দুজনের কমন র্যাঙ্ক ৪০ ও ৬০, দুজনেই অসংরক্ষিত। খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ সর্ভিসের ক্যাডারে রয়েছেন ৪১ জন। ওয়েস্ট বেঙ্গল এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসে চারজনের মধ্যে উন্মেষ মিত্র আবার সামগ্রিক বিচারে ২৫ র্যাঙ্ক করেছেন।