প্রয়াত দিলীপ দোশী । ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা বাঁহাতি স্পিনার দিলীপ সাতাত্তরে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। আচমকা এই খবরে ভারতীয় ক্রিকেট শোকাচ্ছন্ন।দিলীপ দোশীর সঙ্গে বাংলার যোগাযোগও কম ছিল না। বাংলার হয়ে তিনি যে শুধু রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছিলেন তাই নয়, নেতৃত্বও দিয়েছেন দীর্ঘদিন। খেলেছেন সৌরাষ্ট্রের হয়েও। কিন্তু বারেবারেই বলতেন, ‘আমি নিজেকে কলকাতার লোক বলে ভাবতেই ভালোবাসি। বাঙালি ভাবতেও।’ ইডেনে নানা সময়ে এসেছেন বহুবার। পরের দিকে লন্ডনেই থাকতেন। সেখানেই সোমবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন দিলীপ।
১৯৭৯ সালে চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেট অভিষেকেই ভারতের সেরা বোলারের শিরোপা অর্জন করায়। এরপর কলকাতায় ৭০ হাজার দর্শকের সামনে ইডেন গার্ডেনে চার উইকেট তুলে নেন। এরপর ভারতীয় দলে তাঁর জায়গা পাকা হয়ে যায়।দেশের হয়ে ৩৩ টেস্টে ১১৪ উইকেট তাঁর দখলে। ৩০ বছর বয়সের পর টেস্ট অভিষেকের পরেও তাঁর ঝুলিতে আসে ১০০ উইকেটের বেশি উইকেট নেওয়ার মতো ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় বিরল। কারণ, এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন আর মাত্র তিন জন। এঁরা হলেন ক্ল্যারি গ্রিমেট, সৈয়দ আজমল এবং রায়ান হ্যারিস।এই প্রসঙ্গে বলতেই হয়, দিলীপ পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ৬ বার। ১৯৮০–৮১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় দোশীর। একদিনের ক্রিকেটে ৩০ রানে ৪ উইকেট তাঁর সেরা। আর ১৫ ওয়ান ডে ম্যাচে তিনি নিয়েছিলেন ২২ উইকেট। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত দেশের জার্সিতে খেলেন। কিন্তু তারপর বেশিদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারেননি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দিলীপ দোশীর পারফরম্যান্স চমকে দেওয়ার মতো। ২৩৮ ম্যাচে ৮৯৮ উইকেটের মালিক। সৌরাষ্ট্রের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হলেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশিরভাগ সময় বাংলার হয়ে খেলেন। ১৯৭৪ সালে অসমের বিরুদ্ধে ৬ রানে ৬ উইকেট নেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে যা রেকর্ড। রঞ্জিতে তাঁর উইকেট সংখ্যা ৩১৮। তবে এটা নিঃসন্দেহে বলাই যায় সাতের দশকে ভারতীয় স্পিনের স্বর্ণযুগের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। আশির দশকে ভারতীয় ক্রিকেট থেকে সরে যান অনেকটা নীরবেই। আত্মজীবনী ‘স্পিন পাঞ্চ’–এ লিখে গিয়েছেন নানা অজানা ঘটনা। যা এক সময়ের দলিল হয়ে থেকে যাবে।