হতশ্রী ফিল্ডিং আর নির্বিষ বোলিংয়ে ঢাকা পড়ল ভারতের পাঁচ সেঞ্চুরি

দেশের মাটিতে কতটা ভয়ঙ্কর ইংল্যান্ড সেটা বোঝা গেল মঙ্গলবার প্রথম টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে। এর সঙ্গে ভারতীয় দলের কাছে বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়েছে দলের ফিল্ডিং ব্যর্থতা। যার জেরে ৫ উইকেটে ম্যাচ হেরে পিছিয়ে পড়ল ভারত। শুধু ফিল্ডিং ব্যর্থতাই নয, ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে আরও বেশ কিছু ঘটনা খুব পরিষ্কার ভাবেই সামনে আসছে।

তার মধ্যে প্রথমত হল, লোয়ার অর্ডারের রান না পাওয়া। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হয়েছেন ভারতের লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে পড়েছে শেষ ৭ উইকেট। উল্টোদিকে ইংল্যান্ড ২৭৬ রানে ৫ উইকেট হারালেও, শেষ ৫ উইকেটে যোগ হয়েছে ১৮৯ রান। এটাই দুদলের মধ্যে বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। ভারতীয় দলের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও শেষটা বড্ড দ্রুত হচ্ছে। শুধু প্রথম ইনিংস নয়, দ্বিতীয় ইনিংসেও চালকের আসনেই  ছিল ভারত। তবে সেই লোয়ার অর্ডারে শার্দূল ঠাকুর, করুণ নায়ার পুরোপুরি ব্যর্থ। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ৬ উইকেট পড়ে ৩১রানে।

আর রয়েছে বোলিং নিয়ে সমস্যা। জসপ্রীত বুমরাহ-র অসাধারণ পারমরম্যান্স প্রথম ইনিংসে ভারতকে ৬ রানের লিড দেয়। কিন্তু একা কতক্ষণ পারা যায়? প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট তুললেও কোনও সহযোগিতা পাননি সতীর্থদের থেকে। মহম্মদ সিরাজ মাঝেমাঝে দুর্দান্ত কয়েকটা বল করলেও বেশির ভাগ সময়ে লেংথ খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫টা উইকেট নিলেও ওভার প্রতি সাড়ে ৬ রান দিয়েছেন। এক দিনের ক্রিকেটেও এই ইকোনমি রেট অপরাধ। বুমরাহ এক দিকে চাপ রাখলেও প্রসিদ্ধসিরাজ জুটি ইংল্যান্ডকে প্রচুর রান দিয়েছে। আর শার্দূলের কথা যত কম বলা যায় তত ভাল। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬ ওভার বল করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে জোড়া উইকেট তুলে ভারতকে খেলায় ফেরালেও তাতে তাঁর কোনও কৃতিত্ব নেই। দুটো উইকেটই তিনি পেয়েছেন ভাগ্যের জোরে। এর নিট রেজাল্ট, হার দিয়ে সিরিজ় শুরু করল টিম ইন্ডিয়া। পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম টেস্টটা হার দিয়ে শুরু করলেন শুভমান গিল। তিনি নিজে সেঞ্চুরি করলেও তাঁর দলকে জেতাতে পারলেন না। লিডস টেস্ট পাঁচ উইকেটে জিতল ইংল্যান্ড।

প্রথম টেস্ট ম্যাচে টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে করে ৪৭১। যশস্বী জয়সোয়াল, শুভমান গিল ও ঋষভ পন্থ সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু শেষের দিকে অর্থাৎ লোয়ার অর্ডার থেকে কোনও সাপোর্ট পায়নি দল। বোলিংয়েও জশপ্রীত বুমরা একমাত্র ভরসা জোগান পাঁচ উইকেট নিয়ে।

ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে করে ৪৬৫ রান। অলি পোপ সেঞ্চুরি করেন, কিন্তু দলের বাকিরা প্রত্যেকেই রান পান আর এতে এই রান করতে পারে ইংল্যান্ড। ফলে একটা সেঞ্চুরি দিয়ে টিম গেমে বাজিমাত করে ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ব্যাট করতে নেমে করে ৩৬৪ রান। এখানে সেঞ্চুরি করেন ঋষভ পন্থ ও কেএল রাহুল। পন্থ হলেন প্রথম ভারতীয় ব্যাটার যিনি এক ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি পেলেন পাশাপাশি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার তালিকায় শীর্ষে জায়গাও করে নিলেন। কিন্তু পন্থ ও রাহুল ফিরতেই সেই চেনা ছন্দে ফিরল টিম ইন্ডিয়া। লোয়ার অর্ডার ফের ব্যর্থ। শার্দূল ঠাকুর, রবীন্দ্র জাডেজা, করুণনায়াররাপারফর্মকরতেপারেননিকেউ। এরপর ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬৪ রান করে ইংল্যান্ডকে টার্গেট দেয় ৩৭১রানের। এখানে রানের ব্যবধানটা আরও বাড়াতে পারলে অ্যাডভান্টেজে থাকত ভারত।কিন্তু লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতায় চালকের আসনে বসতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া।

এরপর পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৫০ রান ও হাতে ছিল ৯০ ওভার। অন্যদিকে ভারতের দরকার ছিল ১০ উইকেট। এখানেই চরম ব্যর্থ গিল ব্রিগেড। জ়্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেটের ওপেনিং জুটি করে ১৮৮ রান। জ়্যাক ক্রলি করেন ৬৫ ও বেন ডাকেট করেন ১৪৯ রান। এখানেই লাগে প্রথম ধাক্কা। দিনের শুরুতে যেই উইকেট তুলে ইংল্যান্ডের কোমর ভাঙার দরকার ছিল সেটা করতে পারল না। জো রুট হাফ সেঞ্চুরি করেন। বেন স্টোকস করেন ৩৩ রান।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের যে বোলিং করল তা মোটেই প্রত্যাশিত নয়।  জশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ উইকেট পাননি। প্রসিধ কৃষ্ণ ও শার্দূল ঠাকুর দুই উইকেট করে নেন। একটি উইকেট নেন রবীন্দ্র জাডেজা। আর বুমরা ব্যর্থ হতেই ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে জয় ইংল্যান্ডের। সবশেষে একটা কথাই বলতে হয়, পাঁচ-পাঁচটা সেঞ্চুরি করেও ম্যাচ জেতানো সম্ভব নয় এমন হতশ্রী ফিল্ডিং, পাঁচ পাঁচটা ক্যাচ মিস, নির্বিষ বোলিং দিয়ে। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার আগে এবার একবার টিম নিয়ে চিন্তা করতেই হবে ভারতীয় ক্রিকেটের থিঙ্ক ট্যাংককে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + 4 =